এটা কি ?
ন্যাল্প ১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভার একটি বংশগত রোগ। এরজন্য দায়ী জ্বীন হলো- ন্যাল্প-১২ (বা এনএলআরপি ১২), যা ইনফ্লামেটরী সিগনালিং পাথওয়ের ভুমিকা পালন করে। রোগীরা একাধিক উপসর্গ যেমন মাথা ব্যাথা, জয়েন্টে ব্যাথা, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া বা চামড়ায় র্যাশ সহ একাধিকবার এ জ্বরে আক্রান্ত হয়। ঠান্ডায় উপসর্গগুলো মারাতœকরূপে নেয়। বিনা চিকিৎসায় এ রোগ রোগীকে দূর্বল করে দেয় তবে এটি প্রাণঘাতী নয়।
এটা কত সচরাচর ঘটে ?
এ রোগটি খুবই কদাচিৎ হয়। হালনাগাদ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ১০ (দশ) জনের কম রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।
এ রোগের কারণসমূহ কি কি ?
ন্যাল্প-১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভার একটি বংশগত রোগ। এর জন্য দায়ী জ্বীনকে বলে ন্যাল্প-১২ (বা এনএলআরপি ১২)। বংশগতভাবে পরিবর্তিত জ্বীন ইনফ্লেমেটরী রেসপন্সের ব্যাঘাতের জন্য দায়ী। উক্ত ব্যাঘাতের প্রকৃত কার্যসাধন পদ্ধতি এখনও অনুসন্ধানাধীন আছে।
১.৪ ইহা কি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ?
ন্যাল্প-১২ রিলেটেড বিকারেন্ট ফিভার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয় অটোজমাল ডমিনেন্ট প্রধান রোগ হিসেবে। অথ্যাৎ এ রোগ হতে হলে এ রোগে আক্রান্ত পিতা/মাতার প্রয়োজন। মাঝে মাঝে পরিবারের কেহই এ রোগে আক্রান্ত হয়না। হয়ত শিশুর জন্মের সময়ই জ্বীন বিনষ্ট হয় (যা ডিনোভো মিউটেশন নামে পরিচিত) অথবা মাতা পিতা যারা এটা বহন করে তারা কোন ক্লিনিক্যাল উপসর্গ প্রদর্শন করে না বা খুবই হালকা উপসর্গ প্রদর্শন করে (ভেরিয়্যাবল পোনিট্রেন্স)
১.৫ কেন আমার বাচ্চার এ রোগ হয়েছে ? এটা কি প্রতিরোধ করা যেতে পারে ?
ডি নভো মিউটেশন না হয়ে থাকলে, শিশু মা বাবার কাছ থেকে যে ন্যাল্প-১২ জ্বীন বহনকারী প্রাপ্ত হয়েছে। যে এ জ্বীন বহন করে সে ন্যাল্প-১২ বিলেটেড রিকারেন্ট ফিভারের কোন উপসর্গ নাও প্রদর্শন করতে পারে। বর্তমানে এ রোগ প্রতিহত করা যায় না।
১.৬ এটি কি সংক্রামক ?
ন্যাল্প-১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভার কোন সংক্রামক রোগ নয়। কেবল বংশগতভাবে আক্রান্ত কোন ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
১.৭ প্রধান উপসর্গসমূহ কি কি ?
প্রধান উপসর্গ হলো জ্বর। জ্বর ৫-১০ দিন থাকে এবং অনিয়মিত বিরতিতে পুনরায় হয় (সপ্তাহ থেকে মাস) জ্বরের আক্রমনের সাথে একাধিক উপসর্গ থাকে। যে গুলো হতে পারে মাথা ব্যাথা, জয়েন্টে ব্যাথা, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া ত্বকে ফুসকুরি ও মাংসপেশীতে ব্যাথা। ঠান্ডার পরিবেশে জ্বরের তীব্রতা সম্ভবত বৃদ্ধি পায়।
১.৮ সব শিশুর ক্ষেত্রে এ রোগ কি এক রকম ?
সব শিশুর ক্ষেত্রে এ রোগ এক রকম নয়। এ রোগ হালকা থেকে অধিকতর তীব্র হয়। তাছাড়াও, ধরন, স্থায়ীত্বকাল, আক্রমনের তীব্রতা প্রতিবারই ভিন্ন হতে পারে, এমন কি একই শিশুর ক্ষেত্রে ও।
১.৯ শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে কি এ রোগের ভিন্নতা আছে ?
শিশুর বড় হবার সাথে এ রোগের আক্রমনের সংখ্যা কমে আসে এবং তীব্রতা হ্রাস পায়। যা হোক, রোগের কিছু কার্যক্রম অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে থেকে যায়।
২.১ কিভাবে রোগ নির্নয় করা যায় ?
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শারিরীক পরীক্ষার মাধ্যমে উপসর্গ সনাক্ত করে এবং পরিবারের মেডিক্যাল ইতিহাস নিয়ে রোগ নিরূপন করবেন।
কিছু রক্ত পরীক্ষা এ রোগের আক্রমনে প্রদাহ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক। রোগ নিরূপন নিশ্চিত করা হয় বংশগত পরিবর্তন বিশ্লেষনের মাধ্যমে।
২.২ পরীক্ষাসমূহের গুরুত্ব কি ?
উপরের তথ্য অনুযায়ী ন্যাল্প-১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভাব নির্নয়ের জন্য ল্যাবরেটরী পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ্ অতিমাত্রায় প্রদাহ ক্ষেত্রে পরীক্ষসমূহ যেমনঃ সিআরপি, সিরাম এমাইলয়েড প্রোটিন, রক্ত পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর উপসর্গ মুক্ত হওয়ার পর পরীক্ষা সমূহ আবার করানো হয় যখন পরীক্ষার ফলাফল সাধারন লেভেলে আসে।
২.৩ এর চিকিৎসা করা যায় কি ? এটা আরোগ্য হয় কি ?
ন্যাল্প-১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভার আরোগ্য লাভ করে না এর আক্রমনের জন্য কোন প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা নেই। উপসর্গের চিকিৎসা ফোলা ও ব্যাথা কমায়। ফোলা উপসর্গ নিয়ন্ত্রনের কিছু নতুন ঔষধ বর্তমানে পরীক্ষাধীন আছে।
২.৪ এর কি কি চিকিৎসা আছে ?
ন্যাল্প-১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভারের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে নন স্টেরয়ডাল এন্টি ইনফ্লামেটরী ঔষধ মেযনঃ ইনডোমিথাসিন ,করাটিকোস্টেরযেড যেমনঃ প্রেডিনিসোলন এবং সম্ভবতঃ জৈব এজেন্ট যেমনঃ এ্যানাকিনরা এসব ঔষধের কোনটিই সমানভাবে কার্যকর নয়। যদিও সবগুলোই কিছু রোগীর জন্য সহায়ক। ন্যাল্প-১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভারের ঔষধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার প্রমানের এখন ও অভাব রয়েছে।
২.৫ ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি ?
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে কি ঔষধ ব্যবহার করা হয় তার উপর এনএসএআইডি মাথা ব্যাথা পাকস্থলীকে ঘাঁ, কিডনির জন্য ক্ষতিকর কারণ হতে পারে। জৈব এজেন্ট সংক্রমনের সম্ভবনা বাড়াতে পারে। অন্যদিকে ক্যাটিকোস্টেরয়েড বিভিন্ন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার করা হতে পারে।
২.৬ চিকিৎসা কত দীর্ঘকাল চলা উচিত ?
এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরীসংখন নেই। স্বাভাবিক প্রবণতা অনুযায়ী রোগীর উন্নতির সাথে সাথে ঔষধ বন্ধ করাই সুবিবেচনা বিশেষ করে যেখানে রোগ নিষ্ক্রিয় হয়েছে।
২.৭ অপ্রচলিত বা সম্পূরক চিকিৎসা কি হতে পারে ?
কার্যকর সম্পূরক প্রতিকারের কোন প্রকাশিত প্রতিবেদন নেই
২.৮ কি ধরনের পর্যায়ক্রমিক চেক-আপ প্রয়োজন ?
ন্যাল্প-১২ বিলেটেড রিকারেন্ট ফিভাবে আক্রান্ত শিশুদের প্রতিবছর দু বার রক্ত ও প্রশ্রাব পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
২.৯ এ রোগ কত দিন চলে ?
এ রোগটি সাবা জীবন ব্যাপী, যদি ও বয়সের সাথে উপসর্গ হালকা হতে পারে।
২.১০ এ রোগের দীর্ঘ মেয়াদী প্রগনসিস (সম্ভাব্য ফলাফল ও গতিবিধি)
ন্যাল্প-১২ রিলেটেড রিকারেন্ট ফিভার একটি সারা জীবন ব্যাপী রোগ। যদিও বয়স বৃদ্ধির সাথে এর উপসর্গ কিছুটা হালকা হতে পারে। যেহেতু এ রোগটি খুবই কদাচিত, তাই দীর্ঘ মেয়াদী প্রগনসিস এখনও অজানা।
৩.১ শিশুর ও তার পরিবারের দৈনন্দিন জীবনে এ রোগ কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে ?
বারবর এ রোগের আক্রমন জীবনের গুনগতমানে প্রভাব ফেলতে পারে। এ রোগ নির্ণয়ে পর্যাপ্ত দেরী হতে পারে। যা মা বাবার উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা কার্যক্রমও বৃদ্ধি করতে পারে।
৩.২ স্কুল বিষয়ক করনীয় কি ?
দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিছু বিষয় আছে যা শিশুর স্কুলে উপস্থিতিতে সমস্যার কারন হতে পারে এবং এ জন্য শিশুর সম্ভাব্য প্রয়োজনের বিষয়ে শিক্ষকদের অবহিত করা প্রয়োজন। স্বাভাবিক স্কুল কার্যক্রমে শিশুর অংশ গ্রহনের জন্য মাতা পিতা এবং শিক্ষকের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তাই করা উচিত। এটা কেবল শিশুর শিক্ষা কার্যক্রমের সাফল্যেও জন্যই নয় বরং এটা তা সমকক্ষদের এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের নিকট শিশুর গ্রহন যোগ্যতা এবং সঠিক মূল্যায়নের জন্যও প্রয়োজন। কমবয়সী রোগীর জন্য পেশাগত জগতে ভবিষ্যৎ প্রয়োজন রয়েছে এবং এটি দির্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীর দেবার একটি লক্ষ্য।
৩.৩ খেলাধুলার বিষয়ে করনীয় কি ?
খেলাধুলায অংশ গ্রহন একটি শিশুর প্রাতাহিক জীবনের একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। চিকিৎসার একটি উদ্দেশ্য হলো শিশুদেরকে যত টুকু সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে অংশগ্রহন করতে দেয়া এবং তাদের সমকক্ষদের থেকে তাদেরকে ভিন্নতার করে না দেখা। যতটুকু সহ্য করতে পারে সব কার্যক্রমে ততটুকু অংশগ্রহন করতে দেয়া যেতে পারে। তার এ রোগের আক্রমনের সময় সীমিত কার্যক্রম বা বিশ্রামের প্রয়োজন আছে।
৩.৪ খাদ্য বিষয়ক উপদেশ কি ?
খাদ্য বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট উপদেশ নেই। সাধারনতঃ শিশুকে তার বয়সের উপযোগী ভারসাম্য পূর্ণ স্বাভাবিক খাবার দেয়া উচিত। পর্যাপ্ত আমিষ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন যুক্ত স্বাস্থ্যকর ভারসাম্যপূর্ণ খাবার বাড়ন্ত শিশুর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। কর্টিকোস্টেরয়েড নিচ্ছে এমন রোগীর অতি ভোজন, পরিহার করা উচিত কারন এ ঔষধ ক্ষুধা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৩.৫ জলবায়ু কি এ রোগকে প্রভাবিত করতে পারে ?
ঠান্ডা তামপাত্রা এ রোগের উপসর্গ সূত্রপাত করতে পারে।
৩.৬ শিশুকে কি ভ্যাকসিন দেয়া যেতে পাওে ?
হ্যাঁ, শিশুকে ভ্যাকসিন দেয়া যেতে পারে এবং ভ্যাকসিন দেয়া উচিত। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ভ্যাকসিনের বিষয়ে অবহিত করা উচিত কারন কিছু ভ্যাকসিন প্রদত্ত চিকিৎসার সাথে অসংগতিপূর্ন হতে পারে।
৩.৭ যৌন জীবন, গর্ভাবস্থা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক পরামর্শ কি ?
আজ পর্যন্ত প্রাপ্ত গবেষণায় এ বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। সাধারন নিয়ম হলো, অন্যান্য স্বতঃ প্রদাহজনিত রোগের ন্যায় ভ্রুনের উপর জৈব এজেন্টের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারনে আগেই চিকিৎসা গ্রহনপূর্বক গর্ভবতী হওয়ার পরিকল্পনা করাই ভালো।