জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থাইটিস  


বিবরণ 2016
diagnosis
treatment
causes
Juvenile Idiopathic Arthritis
জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থাইটিস
শিশুদের বাতরোগ একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেখানে গিড়াতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হয়। প্রদাহের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ গিড়া ব্যাথা, ফুলে যাওয়া ও নড়া চড়া করতে না পারা। এখানে ইডিওপ্যাথিক অর্থ রোগের কারন অজানা। লাঁবহরষব বলতে এখানে ১৬ বৎসর বয়সের নীচের শিশুদের বোঝানো হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদী রোগ মানে কী ? দীর্ঘ মেয়াদী রোগ তখনই বলা যায় যখন সঠিক চিকিৎসা সত্ত্বেও পুরোপুরি রোগ সেরে যায়না কিন্তু রোগের উপসর্গসমূহে ও পরীক্ষার ফলাফলে পরিবর্তন আসে। শিশুটি কত দিন অসুস্থ থাকবে আগে থেকে সেই ধারনা করাটাও সম্ভব না। এই রোগের প্রাদুর্ভাব কেমন ? এই রোগ তুলনামূলক কম হয় এবং সাধারনত প্রতি হাজারে ১-২ জন শিশু আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগের কারণ কী কী? আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদেরকে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস প্রভৃতির আক্রমন থেকে রক্ষা করে। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের শরীরের বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকর উপাদানসমূহ চিহ্নিত করে ধবংস করতে সক্ষম। দীর্ঘমেয়াদী বাত রোগে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোষ ও ভাল কোষসমূহ আলাদা করা যায় না। যার দরুন শরীরের নিজস্ব স্বাভাবিক কোস সমূহ আক্রান্ত হয়ে গিড়ার প্রদাহ হয়। যার অর্থ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজস্ব স্বাভাবিক কোষ সমূহের বিরুদ্ধেই প্রতিক্রিয়া করে। তবে, অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের মত এই রোগের ও সঠিক ব্যাখ্যা এখনও মূলত অনেকটাই অজানা। ইহা কি বংশগত রোগ ? সরাসরি মা বাবা থেকে সন্তানে সংক্রমিত হয়না বলে ঔওঅ বংশগত রোগ না। তবে কিছু জন্মগত (জেনেটিক) উপাদান (যা এখনও পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয় নি) এ রোগের জন্য দায়ী বলে ধারনা করা হয়। বিশেষষ্ণরা একমত যে কিছু বংশগত ও পরিবেশগত ব্যাপার থাকলে এরোগ হতে পারে। তবে বংশগত উপাদান থাকলেও একই পরিবারের দুই (জীবানু জনিত সংক্রমন) শিশুর এরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ইহা কিভাবে শনাক্ত হয়? ঔওঅ সাধারনত গিড়ায় দীর্ঘ মেয়াদী প্রদাহ থেকেই শনাক্ত করা যায়। তবে গুরুত্ব সহকারে রোগের ইতিহাস, রোগী পরীক্ষা ও ল্যাবরেটরী পরীক্ষা নিরিক্ষা করে গিড়ার অন্যান্য রোগ সমূহ পৃথক করা যায়। ঔওঅ অবশ্যই ১৬ বছর বয়সের পূর্বে শুরু হতে হবে এবং কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ লক্ষনসমূহ থাকতে হবে। সেই সাথে অন্যান্য কারনগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাদ দিতে হবে। রোগের স্থায়ীত্ব ৬ সপ্তাহ সময় এ জন্য ধরা হয়েছে যে অন্যান্য যে সব কারনে স্বল্প স্থায়ী বাত রোগ হতে পারে (যেমন সংক্রমন জনিত প্রদাহ) সে গুলোকে আগে বাদ দিতে হবে। শিশুদের বাত রোগ বলতে (ঔওঅ) সব ধরনের দীর্ঘমেয়াদী বাত যার কোন কারন জানা যায়নি এবং যা শৈশবকালে শুরু হয় তাদেরকেই বোঝায় । ঔওঅ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। (নীচে উল্লেখ করা আছে) এই রোগে গিড়ার ভেতরে কি হয়ে থাকে? গিড়ার ভেতরে একটি পাতলা পর্দা বা আবরন থাকে (সাইনোসিয়াল মেমব্রেন)। এই পর্দ্দাটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের কারনে পুরু হয়ে যায় এবং এই রোগের একটি বিশেষষ্ণত্ব হলোঃ অনেকক্ষন গিড়া নড়াচড়া না করলে শক্তভাবটা বেশী হয়। যেই কারনে শক্তভাব সকালবেলা বেশী অনুভব হয়। বিভিন্ন রকম কোষ ও তরল পদার্থ এর মধ্যে জমা হয়। এই কারনে গিড়া ফুলে যায়, ব্যথা হয়, নড়াচড়ায় সমস্যা হয় এবং গিড়া শক্ত হয়ে যায়। বাচ্চারা সাধারনত গিড়া ভাজ করে রেখে গিড়া ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করে থাকে। গিড়া ভাজ করা এই অবস্থানকে এন্টালজিক অবস্থান বলে। যদি এই অবস্থা দীর্ঘদিন অর্থ্যাৎ সাধারনত ১ মাসের বেশী থাকে তাহলে মাংস পেশী ও রগসমূহ সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে যায় এবং গিড়া বাঁকা হয়ে শক্ত হয়ে যায়। যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে গিড়ার প্রদাহ দুই ভাবে গিড়ার ক্ষতি করে। গিড়ার হাড় ও তরুনাস্থির ক্ষতি হয়ে ভিতরের পর্দ্দা পুরু হয়ে অসমান হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত গিড়ার বিভিন্ন রকমের অস্বাভাবিক নিঃস্বরনের কারনে এক্সরে করলে হাড়ের ভেতরে ক্ষয় হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। দীর্ঘমেয়াদী এন্টালজিক (ভাজ অবস্থায়) অবস্থায় রাখলে মাংস পেশী শুকিয়ে ছোট হয়ে যায় এবং অবশেষে গিড়া পুরোপুরি বাকা হয়ে যায়। দীর্ঘদিন থাকলে মাংস পেশী শুকিয়ে যায় তাতে গিরা পুরোপুরি সোজা বা ভাঁজ করা যায় না। শিশু বাত রোগের প্রকার ভেদঃ এই রোগের কি বিভিন্ন ধরন আছে? শিশু বাত রোগটি বিভিন্ন ধরনের। আক্রান্ত গিড়ার সংখ্যা ও অন্যান্য উপসর্গ যেমন জ্বর, গায়ে লাল দানা এবং আরও কিছু লক্ষন দ্বারা তাদেরকে আলাদা করা যায়। প্রথম ৬ মাসের লক্ষনের উপর ভিত্তি করে এই রোগের প্রকার ভেদ করা হয়ে থাকে। সিসটেমিক শিশু বাত রোগ টি কি ? সিসটেমিক বলতে গিড়া ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপসর্গসমূহ কে বোঝায়। সিসটেমিক শিশু বাত রোগে সাধারনত গিড়া আক্রান্ত হওয়ায় সময় বা তার আগে থেকেই জ্বর, গায়ে চাকা/লাল দানার উপস্থিতি থাকে। এখানে দীর্ঘমেয়াদী জ্বর থাকে এবং চাকা/লাল দানা থাকে, যা সাধারনত তীব্র জ্বরের সময় পাওয়া যায় ও অন্যান্য উপসর্গ যেমন মাংস পেশীতে ব্যথা, যকৃত, প্লিহা বা লসিকা গ্রন্থি বড় হওয়া হৃদপিন্ড বা ফুসফুসের পর্দার প্রদাহ হতে পারে। সাধারনত ৫ বা তার বেশি গিড়া প্রদাহ অসুখের শুরু থেকে থাকতে পারে। এই রোগে ছেলে/মেয়ে সমানভাবে আক্রান্ত হয়। সাধারনত বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া শুরু করার আগের বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হয়। প্রায় অর্ধেক রোগীর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জ্বর ও গিড়া প্রদাহ থাকে। তাদের রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনাও ভালো। আর বাকি অর্ধেক রোগীর জ্বর ভাল হয়ে যায় কিন্তু গিড়ার প্রদাহ মারাতœক আকার ধারন করে এবং চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বল্প কিছু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর ও গিড়ার প্রদাহ দুটোই অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থেকে যায়। মোট বাত রোগের ১০% এই রোগ বাচ্চাদের ই হয়, বড়দের খুবই কম হয়। বহু গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ কি ? এই ক্ষেত্রে পাঁচটা বা তার বেশি গিড়া আক্রান্ত হয় প্রথম ৬ মাসে জ্বর ছাড়াই। রক্ত পরীক্ষা করে দুই ধরন আলাদা করা যায়ঃ আর এফ পজিটিভ ও আর এফ নেগেটিভ। আর এফ পজিটিভ বহু গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ ঃ এটা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুবই কম হয় (৫% এর কম) এটা বড়দের বাত রোগের সমতুল্য। এই রোগে শরীরের দুই পাশের হাত পায়ের ছোট ছোট গিড়া প্রথমে আক্রান্ত হয়ে অন্য গিড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েদের এই রোগ বেশি হয় এবং সাধারনত ১০ বছর বয়েসের পরে শুরু হয়। এই রোগটি প্রায়শঃই মারাতœক ধরনের গীড়া প্রদাহের সৃষ্টি করে। আরএফ নেগেটিভ বহু গিড়ার আক্রান্ত বাত: কিছু সংখ্যক বাত ১৫-২০%। বাচ্চাদের যে কোন বয়সে এই রোগ হতে পারে। এখানে ছোট বড় সহ শরীরের যে কোন গিড়া আক্রান্ত হতে পারে। উভয় প্রকার অসুখ ধরা পড়ার সাথে সাথেই যথাসম্ভব কাল বিলম্ব না করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রোগ ধরা পড়ার সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। যদিও চিকিৎসার উপকারিতা আগে থেকে ধারনা করা মুশকিল। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। স্বল্প সংখ্যক গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ: এই রোগে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় এবং সমস্ত বাতের প্রায় ৫০% স্বল্প সংখ্যক গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ। এই ক্ষেত্রে অসুখের প্রথম ৬ মাসে ৫টার কম গিড়া আক্রান্ত হয় এবং সাথে অন্য কোন সাধারন উপসর্গ থাকে না। বড় বড় গিড়া (হাটু, গোড়ালি) শরীরের দুই পায়ে একই ভাবে আক্রান্ত হয় না। অনেক সময় শুধু একটা গিড়ায় আক্রান্ত হয়। কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত গিড়ার সংখ্যা প্রথম ৬ মাসের পর বেড়ে ৫ বা তার বেশি হয়। তাদেরকে সম্প্রসারিত স্বল্প গিড়ার বাত রোগ বলে। যাদের ক্ষেত্রে রোগের পুরো সময়টায় ৫টার কম গিড়া আক্রান্ত থাকে, তাদেরকে স্থায়ী স্বল্প গিড়ার বাত রোগ বলে। স্বল্প গিড়া আক্রান্ত বাত রোগ সাধারনত ৬ বছর বয়সের পূর্বেই শুরু হয় এবং মেয়েদের বেশী হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করলে চিকিৎসার ফলাফল স্থায়ী স্বল্প গিড়ার ক্ষেত্রে ভাল। সম্প্রসারিত ক্ষেত্রে এই রোগের ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর চোখের জটিলতা যেমন চোখের সামনের অংশের প্রদাহ হতে পারে। যেহেতু ইউভিয়ার সামনের অংশ আইরিশ এবং সিলিয়ারী বডি দ্বারা গঠিত হয় এক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী আইরিডোসাইক্লিইটিস বা এন্টেরিয়র ইউভিআইটিস হতে পারে। শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী বাত রোগে কোন রকমের উপসর্গ যেমন ব্যথা/লাল হওয়া হতে পারে। যদি ধরা না পড়ে এবং চিকিৎসা না করা হয় তবে চোখের মারাতœক ক্ষতি হতে পারে। খুব দ্রুত সনাক্ত করা খুবই জরুরী। কারন এখানে চোখ লাল হয়না এবং বাচ্চা চোখে দেখতে কোন সমস্যার কথা বলেনা। সাধারনত যাদের অ^ল্প বয়সে গিড়ার বাত হয় এবং রক্তে এএনএ পজিটিভ থাকে তাদের এ জটিলতা বেশী হয়। যেসব বাচ্চা এ চক্ষু জটিলতার ঝুঁকিতে আছে তাদেরকে একটি বিশেষ যন্ত্র স্লিট ল্যাম্পের সাহায্যে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দ্বারা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করতে হবে। সাধারনত প্রতি ৩ মাস পরপর এবং দীর্ঘদিন ধরে এটি করতে হবে। সোরিয়াটিক বাত রোগঃ সোরিয়াসিসের সাথে বাত থাকলে সোরিয়াটিক বাত রোগ বলা হয়। সোরিয়াসিস এক প্রকার চামড়ার প্রদাহ যাতে হাটু ও কনুইতে চামড়া খসখসে ও থোকা থোকা খোসা আকারের হয়ে যায়। কখনও কখনও শুধু হাতের নখে হয়। পরিবারের কারও সোরিয়াসের ইতিহাস থাকতে পারে। চামড়ার সমস্যা গিড়ার প্রদাহের সাথে বা আগেও হতে পারে। এই বাতে গিড়ার প্রদাহের বৈশিষ্ট্য হলো পুরো আঙ্গুল বা আঙ্গুলের মাথা ফুলে যায়। নখে ফুটা ফুটা (Pitting) দেখা যায়। মা বাবা /ভাই বোনের সেরিয়াসিস থাকতে পারে। চোখে দীর্ঘস্থায়ী আইরিডো সাই¯দেখা যায়। মা বাবা /ভাই বোনের সেরিয়াসিস থাকতে পারে।
evidence-based
consensus opinion
2016
PRINTO PReS
জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থাইটিস কি ?
শিশু বাত রোগের প্রকার ভেদঃ
রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাঃ
প্রতিদিনের জীবনঃ



জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থাইটিস কি ?

এটা কি?
শিশুদের বাতরোগ একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেখানে গিড়াতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হয়। প্রদাহের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ গিড়া ব্যাথা, ফুলে যাওয়া ও নড়া চড়া করতে না পারা। এখানে ইডিওপ্যাথিক অর্থ রোগের কারন অজানা। লাঁবহরষব বলতে এখানে ১৬ বৎসর বয়সের নীচের শিশুদের বোঝানো হচ্ছে।

দীর্ঘ মেয়াদী রোগ মানে কী ?
দীর্ঘ মেয়াদী রোগ তখনই বলা যায় যখন সঠিক চিকিৎসা সত্ত্বেও পুরোপুরি রোগ সেরে যায়না কিন্তু রোগের উপসর্গসমূহে ও পরীক্ষার ফলাফলে পরিবর্তন আসে।
শিশুটি কত দিন অসুস্থ থাকবে আগে থেকে সেই ধারনা করাটাও সম্ভব না।

এই রোগের প্রাদুর্ভাব কেমন ?
এই রোগ তুলনামূলক কম হয় এবং সাধারনত প্রতি হাজারে ১-২ জন শিশু আক্রান্ত হতে পারে।

এই রোগের কারণ কী কী?
আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদেরকে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস প্রভৃতির আক্রমন থেকে রক্ষা করে। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের শরীরের বাইরে থেকে আসা ক্ষতিকর উপাদানসমূহ চিহ্নিত করে ধবংস করতে সক্ষম।
দীর্ঘমেয়াদী বাত রোগে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোষ ও ভাল কোষসমূহ আলাদা করা যায় না। যার দরুন শরীরের নিজস্ব স্বাভাবিক কোস সমূহ আক্রান্ত হয়ে গিড়ার প্রদাহ হয়। যার অর্থ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজস্ব স্বাভাবিক কোষ সমূহের বিরুদ্ধেই প্রতিক্রিয়া করে।
তবে, অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের মত এই রোগের ও সঠিক ব্যাখ্যা এখনও মূলত অনেকটাই অজানা।

ইহা কি বংশগত রোগ ?
সরাসরি মা বাবা থেকে সন্তানে সংক্রমিত হয়না বলে ঔওঅ বংশগত রোগ না। তবে কিছু জন্মগত (জেনেটিক) উপাদান (যা এখনও পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয় নি) এ রোগের জন্য দায়ী বলে ধারনা করা হয়। বিশেষষ্ণরা একমত যে কিছু বংশগত ও পরিবেশগত ব্যাপার থাকলে এরোগ হতে পারে। তবে বংশগত উপাদান থাকলেও একই পরিবারের দুই (জীবানু জনিত সংক্রমন) শিশুর এরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

ইহা কিভাবে শনাক্ত হয়?
ঔওঅ সাধারনত গিড়ায় দীর্ঘ মেয়াদী প্রদাহ থেকেই শনাক্ত করা যায়। তবে গুরুত্ব সহকারে রোগের ইতিহাস, রোগী পরীক্ষা ও ল্যাবরেটরী পরীক্ষা নিরিক্ষা করে গিড়ার অন্যান্য রোগ সমূহ পৃথক করা যায়।
ঔওঅ অবশ্যই ১৬ বছর বয়সের পূর্বে শুরু হতে হবে এবং কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ লক্ষনসমূহ থাকতে হবে। সেই সাথে অন্যান্য কারনগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাদ দিতে হবে।
রোগের স্থায়ীত্ব ৬ সপ্তাহ সময় এ জন্য ধরা হয়েছে যে অন্যান্য যে সব কারনে স্বল্প স্থায়ী বাত রোগ হতে পারে (যেমন সংক্রমন জনিত প্রদাহ) সে গুলোকে আগে বাদ দিতে হবে। শিশুদের বাত রোগ বলতে (ঔওঅ) সব ধরনের দীর্ঘমেয়াদী বাত যার কোন কারন জানা যায়নি এবং যা শৈশবকালে শুরু হয় তাদেরকেই বোঝায় ।
ঔওঅ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। (নীচে উল্লেখ করা আছে)

এই রোগে গিড়ার ভেতরে কি হয়ে থাকে?
গিড়ার ভেতরে একটি পাতলা পর্দা বা আবরন থাকে (সাইনোসিয়াল মেমব্রেন)। এই পর্দ্দাটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের কারনে পুরু হয়ে যায় এবং এই রোগের একটি বিশেষষ্ণত্ব হলোঃ অনেকক্ষন গিড়া নড়াচড়া না করলে শক্তভাবটা বেশী হয়। যেই কারনে শক্তভাব সকালবেলা বেশী অনুভব হয়। বিভিন্ন রকম কোষ ও তরল পদার্থ এর মধ্যে জমা হয়। এই কারনে গিড়া ফুলে যায়, ব্যথা হয়, নড়াচড়ায় সমস্যা হয় এবং গিড়া শক্ত হয়ে যায়।
বাচ্চারা সাধারনত গিড়া ভাজ করে রেখে গিড়া ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করে থাকে। গিড়া ভাজ করা এই অবস্থানকে এন্টালজিক অবস্থান বলে। যদি এই অবস্থা দীর্ঘদিন অর্থ্যাৎ সাধারনত ১ মাসের বেশী থাকে তাহলে মাংস পেশী ও রগসমূহ সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে যায় এবং গিড়া বাঁকা হয়ে শক্ত হয়ে যায়।
যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে গিড়ার প্রদাহ দুই ভাবে গিড়ার ক্ষতি করে। গিড়ার হাড় ও তরুনাস্থির ক্ষতি হয়ে ভিতরের পর্দ্দা পুরু হয়ে অসমান হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত গিড়ার বিভিন্ন রকমের অস্বাভাবিক নিঃস্বরনের কারনে এক্সরে করলে হাড়ের ভেতরে ক্ষয় হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়। দীর্ঘমেয়াদী এন্টালজিক (ভাজ অবস্থায়) অবস্থায় রাখলে মাংস পেশী শুকিয়ে ছোট হয়ে যায় এবং অবশেষে গিড়া পুরোপুরি বাকা হয়ে যায়। দীর্ঘদিন থাকলে মাংস পেশী শুকিয়ে যায় তাতে গিরা পুরোপুরি সোজা বা ভাঁজ করা যায় না।


শিশু বাত রোগের প্রকার ভেদঃ

এই রোগের কি বিভিন্ন ধরন আছে?
শিশু বাত রোগটি বিভিন্ন ধরনের। আক্রান্ত গিড়ার সংখ্যা ও অন্যান্য উপসর্গ যেমন জ্বর, গায়ে লাল দানা এবং আরও কিছু লক্ষন দ্বারা তাদেরকে আলাদা করা যায়। প্রথম ৬ মাসের লক্ষনের উপর ভিত্তি করে এই রোগের প্রকার ভেদ করা হয়ে থাকে।

সিসটেমিক শিশু বাত রোগ টি কি ?
সিসটেমিক বলতে গিড়া ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপসর্গসমূহ কে বোঝায়।
সিসটেমিক শিশু বাত রোগে সাধারনত গিড়া আক্রান্ত হওয়ায় সময় বা তার আগে থেকেই জ্বর, গায়ে চাকা/লাল দানার উপস্থিতি থাকে। এখানে দীর্ঘমেয়াদী জ্বর থাকে এবং চাকা/লাল দানা থাকে, যা সাধারনত তীব্র জ্বরের সময় পাওয়া যায় ও অন্যান্য উপসর্গ যেমন মাংস পেশীতে ব্যথা, যকৃত, প্লিহা বা লসিকা গ্রন্থি বড় হওয়া হৃদপিন্ড বা ফুসফুসের পর্দার প্রদাহ হতে পারে। সাধারনত ৫ বা তার বেশি গিড়া প্রদাহ অসুখের শুরু থেকে থাকতে পারে। এই রোগে ছেলে/মেয়ে সমানভাবে আক্রান্ত হয়। সাধারনত বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া শুরু করার আগের বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হয়।
প্রায় অর্ধেক রোগীর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জ্বর ও গিড়া প্রদাহ থাকে। তাদের রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনাও ভালো। আর বাকি অর্ধেক রোগীর জ্বর ভাল হয়ে যায় কিন্তু গিড়ার প্রদাহ মারাতœক আকার ধারন করে এবং চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বল্প কিছু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর ও গিড়ার প্রদাহ দুটোই অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী হয়ে থেকে যায়। মোট বাত রোগের ১০% এই রোগ বাচ্চাদের ই হয়, বড়দের খুবই কম হয়।

বহু গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ কি ?
এই ক্ষেত্রে পাঁচটা বা তার বেশি গিড়া আক্রান্ত হয় প্রথম ৬ মাসে জ্বর ছাড়াই। রক্ত পরীক্ষা করে দুই ধরন আলাদা করা যায়ঃ আর এফ পজিটিভ ও আর এফ নেগেটিভ।
আর এফ পজিটিভ বহু গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ ঃ এটা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুবই কম হয় (৫% এর কম) এটা বড়দের বাত রোগের সমতুল্য। এই রোগে শরীরের দুই পাশের হাত পায়ের ছোট ছোট গিড়া প্রথমে আক্রান্ত হয়ে অন্য গিড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। মেয়েদের এই রোগ বেশি হয় এবং সাধারনত ১০ বছর বয়েসের পরে শুরু হয়। এই রোগটি প্রায়শঃই মারাতœক ধরনের গীড়া প্রদাহের সৃষ্টি করে।
আরএফ নেগেটিভ বহু গিড়ার আক্রান্ত বাত: কিছু সংখ্যক বাত ১৫-২০%। বাচ্চাদের যে কোন বয়সে এই রোগ হতে পারে। এখানে ছোট বড় সহ শরীরের যে কোন গিড়া আক্রান্ত হতে পারে।
উভয় প্রকার অসুখ ধরা পড়ার সাথে সাথেই যথাসম্ভব কাল বিলম্ব না করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রোগ ধরা পড়ার সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। যদিও চিকিৎসার উপকারিতা আগে থেকে ধারনা করা মুশকিল। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে।

স্বল্প সংখ্যক গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ:
এই রোগে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় এবং সমস্ত বাতের প্রায় ৫০% স্বল্প সংখ্যক গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ। এই ক্ষেত্রে অসুখের প্রথম ৬ মাসে ৫টার কম গিড়া আক্রান্ত হয় এবং সাথে অন্য কোন সাধারন উপসর্গ থাকে না। বড় বড় গিড়া (হাটু, গোড়ালি) শরীরের দুই পায়ে একই ভাবে আক্রান্ত হয় না। অনেক সময় শুধু একটা গিড়ায় আক্রান্ত হয়। কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত গিড়ার সংখ্যা প্রথম ৬ মাসের পর বেড়ে ৫ বা তার বেশি হয়। তাদেরকে সম্প্রসারিত স্বল্প গিড়ার বাত রোগ বলে। যাদের ক্ষেত্রে রোগের পুরো সময়টায় ৫টার কম গিড়া আক্রান্ত থাকে, তাদেরকে স্থায়ী স্বল্প গিড়ার বাত রোগ বলে।
স্বল্প গিড়া আক্রান্ত বাত রোগ সাধারনত ৬ বছর বয়সের পূর্বেই শুরু হয় এবং মেয়েদের বেশী হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করলে চিকিৎসার ফলাফল স্থায়ী স্বল্প গিড়ার ক্ষেত্রে ভাল। সম্প্রসারিত ক্ষেত্রে এই রোগের ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর চোখের জটিলতা যেমন চোখের সামনের অংশের প্রদাহ হতে পারে। যেহেতু ইউভিয়ার সামনের অংশ আইরিশ এবং সিলিয়ারী বডি দ্বারা গঠিত হয় এক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী আইরিডোসাইক্লিইটিস বা এন্টেরিয়র ইউভিআইটিস হতে পারে। শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী বাত রোগে কোন রকমের উপসর্গ যেমন ব্যথা/লাল হওয়া হতে পারে। যদি ধরা না পড়ে এবং চিকিৎসা না করা হয় তবে চোখের মারাতœক ক্ষতি হতে পারে। খুব দ্রুত সনাক্ত করা খুবই জরুরী। কারন এখানে চোখ লাল হয়না এবং বাচ্চা চোখে দেখতে কোন সমস্যার কথা বলেনা। সাধারনত যাদের অ^ল্প বয়সে গিড়ার বাত হয় এবং রক্তে এএনএ পজিটিভ থাকে তাদের এ জটিলতা বেশী হয়।
যেসব বাচ্চা এ চক্ষু জটিলতার ঝুঁকিতে আছে তাদেরকে একটি বিশেষ যন্ত্র স্লিট ল্যাম্পের সাহায্যে চক্ষু বিশেষজ্ঞ দ্বারা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করতে হবে। সাধারনত প্রতি ৩ মাস পরপর এবং দীর্ঘদিন ধরে এটি করতে হবে।

সোরিয়াটিক বাত রোগঃ
সোরিয়াসিসের সাথে বাত থাকলে সোরিয়াটিক বাত রোগ বলা হয়। সোরিয়াসিস এক প্রকার চামড়ার প্রদাহ যাতে হাটু ও কনুইতে চামড়া খসখসে ও থোকা থোকা খোসা আকারের হয়ে যায়। কখনও কখনও শুধু হাতের নখে হয়। পরিবারের কারও সোরিয়াসের ইতিহাস থাকতে পারে। চামড়ার সমস্যা গিড়ার প্রদাহের সাথে বা আগেও হতে পারে। এই বাতে গিড়ার প্রদাহের বৈশিষ্ট্য হলো পুরো আঙ্গুল বা আঙ্গুলের মাথা ফুলে যায়। নখে ফুটা ফুটা (Pitting) দেখা যায়। মা বাবা /ভাই বোনের সেরিয়াসিস থাকতে পারে। চোখে দীর্ঘস্থায়ী আইরিডো সাই¯দেখা যায়। মা বাবা /ভাই বোনের সেরিয়াসিস থাকতে পারে।.
গিড়ার ও চামড়ার চিকিৎসার ফলাফল বিভিন্ন রকম হতে পারে। যদি কোন বাচ্চার ৫ টার কম গিড়ার সমস্যা থাকে তাহলে চিকিৎসা স্বল্প গিড়ায় আক্রান্ত বাত রোগের চিকিৎসার মতই। যদি ৫ টার বেশি গিড়াতে হয় তাহলে বহু গিড়া আক্রান্ত রোগের মত।

এনথেসাইটিস সহ দীর্ঘ মেয়াদী বাত রোগ ।
প্রধান লক্ষন হল পায়ের বড় গিড়া আক্রান্ত হয় এবং এনথেসাইটিস অর্থ মাংসের রগ, যেখানে হাড়ের সাথে লেগে থাকে তার প্রদাহ হয়। এ জায়গার প্রদাহে প্রচুর ব্যথা থাকে। এনথেসাইটিস সাধারনতঃ গোড়ালীর পেছনে ও পায়ের তালুতে হয় যেখানে একিলিস টেন্ডন থাকে। কখনও কখনও চোখের তীব্র ইউভিআইটিস হয় যাতে চোখ লাল ও পানি ঝরে এবং আলোতে তাকানো যায়না। অধিকাংশ রোগীর রক্ত পরীক্ষা করলে এইচএল এ-বি ২৭ পজিটিভ পাওয়া যায়। ইহাতে পারিবারিক যোগ সূত্রতা পাওয়া যেতে পারে এবং এই রোগ ছেলেদের বেশি হয় এবং সাধারনত ৬ বছরের পরে দেখা যায়। রোগের গতিবিধি বিভিন্ন রকম। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এ রোগ একটা সময়ের পরে ভাল হয়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের নিচের অংশে আক্রান্ত হয়ে কোমরের নড়াচড়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। পিঠের নিচের দিকে ব্যথা সাধারনত সকালে বেশী হয়। গিড়া শক্ত হয়ে যাওয়া অর্থ মেরুদন্ডের হাড়ের প্রদাহ বুঝায়। এই রোগ বড়দের রোগ এনকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস এর মতো হয়ে থাকে।

কি কি কারনে দীর্ঘস্থায়ী আইরিডোসাইক্লটিস হয় ? বাত রোগের সাথে কোন সর্ম্পক আছে কি?
চোখের প্রদাহ (আইরিডোসাইক্লিইটিস) শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক ক্রিয়ার ফল। তবে সঠিক ব্যাখা এখনও জানা যায় নাই। যে সব বাতরোগ কম বয়সে শুরু হয় এবং এএনএ পজিটিভ থকে তাদের এ জটিলতা বেশী হবার কথা।
চোখের সাথে গিড়া রোগের সম্পর্কের কারনগুলো এখনও জানা যায় নি। তবে মনে রাখা দরকার যে বাত ও আইরিডোসাইক্লিইটিস আলাদা আলাদা ভাবে চলতে পারে। এই কারনে বাত ভাল হয়ে গেলেও নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করে যেতে হবে কারন চোখের প্রদাহ পুনরায় হতে পারে কোন লক্ষন ছাড়াই এমনকি বাত ভাল হয়ে গেলেও আইরিডোসাইক্লইটিসস এর গতি প্রকৃতি গিড়ার গতি প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকতে পারে এবং মাঝে মাঝেই তীব্র আকার ধারন করতে পারে।
সাধারনত বাতের পরে অথবা বাতের সাথেই আইরিডোসাইক্লইটিসস ধরা পরে। কদাচিৎ বাতের পূর্বেই ধরা পরতে পারে। তারা চরম হতভাগ্য কারন এটা চুপ চাপ থাকে, ধরা পরে দেরি করে এবং সে সাথে চোখে দেখতে সমস্যা হয়। এই রোগীরা খুবই দূর্ভাগা এই কারনে যে বাত রোগ না থাকায় ও চোখের কোন লক্ষন না থাকার কারনে অসুবিধা ধরা পড়ে না। পরবর্তীকালে দৃষ্টি শক্তির মারাতœক ক্ষতি হতে পারে।

বাচ্চাদের অসুখ কি বড়দের থেকে আলাদা ?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্য। বহুগিড়া আক্রান্ত আরএফ পজিটিভ বাত রোগ যা বড়দের বাত রোগের প্রায় ৭০%, তা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৫% এরও কম। স্বল্প গিড়া বাত আক্রান্ত রোগ বাচ্চাদের বাতের প্রায় ৫০% এবং এটা বড়দের হয় না। সিসটেমিক বাত রোগ বাচ্চাদের হয়ে থাকে এবং কালে ভদ্রে বড়দের হতে পারে।


রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাঃ

কি কি পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার?
রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার হয়। গিড়ায় পরীক্ষা ও চোখ পরীক্ষার সাথে সাথে বিশেষ করে কোন ধরনের বাত রোগ তা বলার জন্য এবং চোখের জটিলতার সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানার জন্য।
যদি পরীক্ষা নিরীক্ষায় আরএফ পজিটিভ হয় এবং টাইটার বেশী ও স্থায়ী হয় তা বাত রোগের ধরন নির্ধারন করে।
এএনএ প্রায়ই স্বল্প গিড়া আক্রান্ত বাত রোগের ক্ষেত্রে পজিটিভ হয় বিশেষ করে অত্যন্ত কম বয়সীদের বেলায়। এদের চোখের জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে প্রতি ৩ মাস অন্তর চক্ষু পরীক্ষা করা উচিত।
এনথেসাইটিস সহ বাত রোগের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০% রোগীর এইচ এলএ বি-২৭ পজিটিভ হয়। সুস্থ লোকের ক্ষেত্রে মাত্র ৫-৮% পজিটিভ হয় হতে পারে।
অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ইএসআর অথবা সিআরপি প্রদাহের ব্যাপকতা বুঝতে সাহায্য করে। তবে রক্ত পরীক্ষায় যাই পাওয়া যাক, রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা বেশীর ভাগ নির্ভর করে ল্যাবরেটরী পরীক্ষার চাইতে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার উপর।
চিকিৎসার উপর নির্ভর করে মাঝে মাঝে রক্তের পরীক্ষা, যকৃতের কার্যকারিতা পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হয় ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা চিকিৎসার ক্ষতিকর দিক বোঝার জন্য। গিড়ার প্রদাহ সাধারনত শারিরীক পরীক্ষা ও আল্ট্রাসাউন্ড করে বুঝা যায়। মাঝে মধ্যে এক্স-রে, এমআরআই করে হাড়ের স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্নয় করে চিকিৎসা কার্যক্রম সমন্বয় করতে হয়।

আমরা কিভাবে এর চিকিৎসা করতে পারি?
সুস্থ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল ব্যথা, দূর্বলতা ও গিড়া শক্ত হওয়া কমানো। অন্যান্য উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ গিড়া ও হাড়ের ক্ষয় কমানো, গিড়া বাকা কমানো, গিড়ার নড়াচড়া উন্নত করে শারিরীক বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিক রাখা। বিগত দশ বছরে শিশুদের বাত রোগের চিকিৎসার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নতুন নতুন ঔষধ আবিস্কৃত ও প্রয়োগ হচ্ছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জৈবিক ঔষধের আবিস্কার ও প্রয়োগ। তার পরও কিছু শিশুর ক্ষেত্রে চিকিৎসা অকার্যকর হতে পারে র্অথাৎ অসুখ অব্যাহত থাকতে পারে এবং গিড়ার প্রদাহ ও থেকে যেতে পারে। চিকিৎসার নির্দেশিকা থাকা সত্বেও একেকজনের চিকিৎসা একেক ধরনের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অভিভাবকের অংশ গ্রহন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা সাধারনত গিড়ার প্রদাহ নিরোধ ঔষধের উপর নির্ভরশীল এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার উপর যা গিড়ার কাজ ঠিক রাখে এবং গিড়া বাকা হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
শিশু বাত রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং অনেক বিষয়ের বিশেষজ্ঞের সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল (শিশু বিশেষজ্ঞ, বাত রোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও অর্থোপেডিক্স সার্জন।
পরবর্তী অংশে বর্তমান চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ননা করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট ঔষধের উপর বিষদ তথ্যাবলী ঔষধ অংশে পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক দেশে অনুমোদিত ঔষধের তালিকা আছে এবং সব ঔষধ সবদেশে সহজে প্রাপ্য নয়।

স্টেরয়েড বিহীন প্রদাহ নির্মূলকারী ঔষধঃ
ঐতিহ্যগতভাবে সকল শিশু বাত রোগ এবং অন্যান্য বাত সর্ম্পকিত রোগের মূল চিকিৎসা। যদিও এই ঔষধগুলো উপসগর্, প্রদাহ এবং জ্বর কমাতে পারে কিন্তু কোন মতেই তারা মূল রোগ সারাতে পারেনা। কিন্তু প্রদাহের ফলে যে লক্ষন সমূহ হয় তাকে কমিয়ে রাখে। ব্যাপক ব্যবহৃত হয় যে সমস্ত ঔষধ তার মধ্যে আছে ন্যাক্সেপ্রেন ও আইবোপ্রাফেন। এ্যাসপিরিন যদিও কার্যকরী ও সুলভ কিন্তু তার ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে আজকাল কম ব্যবহৃত হয়। স্টেরয়েড বিহীন প্রদাহ নির্মূলকারী ঔষধগুলো মোটামুটি সহনশীল, তারপরও গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হতে পারে যদিও বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক কম হয়। সাধারনত হয়ই না। কখনও কখনও একটা ঔষধ অকার্যকর হলেও অন্য একটা ঔষধ কার্যকরী হতে পারে। একসঙ্গে দুই বা ততোধিক ঔষধ ব্যবহার করা উচিত নয়। সাধারনত দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসা পর সর্বোচ্চ প্রদাহ র্নিমূলের ফলাফল পাওয়া যায়।

গিড়ায় ইনজেকশনঃ
এক বা একাধিক গিড়ায় ইনজেকশন দেয়া হয়। প্রচন্ড প্রদাহের কারনে যদি তীব্র ব্যাথা থাকে অথবা নড়াচড়ায় অক্ষম থাকলে গিরায় ইনজেকশন ব্যবহার হয়। ইহা একটি দীর্ঘ মেয়াদী স্টেরয়েড। ট্রায়েমসিনোলন হেক্সাএসিটোনাইড বেশি ব্যবহার করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ফলের জন্য পুরো শরীরের উপর এর প্রভাব কম। স্বল্প গিড়া আক্রান্ত বাত রোগের জন্য ইহা মুল চিকিৎসা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্য চিকিৎসার সাথেও এটা ব্যবহার হয়। এই চিকিৎসা একই গিড়ায় অনেকবার পুনরাবৃত্তি করা যায়। বাচ্চার বয়স, গিড়ার ধরন এবং সংখ্যার উপর নির্ভর করে ইহা পুরো অবশ করে অথবা শুধু গিরা অবশ করে দেওয়া যায়। একই গিড়ায় বছরে ৩-৪ টার বেশি ইনজেকশন প্রযোজ্য নয়।
গিড়ার ইনজেকশনের সাথে অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয় দ্রুত নিরাময়ের জন্য। যদি দরকার হয়, গিড়ায় ইনজেকশন অন্যান্য ঔষধের কার্যকারিতা শুরুর আগে দেওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপের ঔষধঃ
যাদের ক্ষেত্রে এনএসএইড এবং স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়ার পরও বহু গিড়া আক্রান্ত বাত একই রকমের থেকে যায়, তাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের ঔষধ প্রথম ধাপের ঔষধের সাথে যোগ করে দেয়া হয়ে থাকে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ঔষধের প্রভাব সাধারনত কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে বুঝতে পারা যায়।

মেথোট্রেক্সেটঃ
দ্বিতীয় ধাপের ঔষধের মধ্যে মেথোট্রেক্সট সারাবিশ্বে শিশু বাত রোগের চিকিৎসায় প্রথম পছন্দের ঔষধ। বহু গবেষনায় এর কার্যকারিতা ও নিরাপদ ব্যবহার চিকিৎসার অনেক বছর পরও প্রমানিত। চিকিৎসা শাস্ত্রে এখন এর সর্বোচ্চ কার্যকরী মাত্রা (১৫ মি গ্রা/বর্গমি মুখে বা চামড়ার নীচে ইনজেকশনের মাধ্যমে) সাপ্তাহিক মেথোট্রেক্সেট বাচ্চাদের বহু গিড়া আক্রান্ত বাত রোগের ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ। ইহা অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকরী। ইহার প্রদাহ নিবোধী গুন আছে। সেই সাথে ইহা অসুখের গতি থামিয়ে দেয় এবং অসুখ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ইহা শরীরে যথেষ্ট সহনশীল তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং লিভারের এনজাইম এসজিপিটি বেড়ে যাওয়া সবচেয়ে বড় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। এই ঔষধের চিকিৎসার সময় ক্ষতিকর প্রভাব বুঝার জন্য সময়ে সময়ে ল্যাবরেটরী পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
শিশু বাত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশ্বের অনেক দেশে মেথোট্রেক্সেট অনুমোদিত। লিভারের উপর সহ অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমানোর জন্য মেথোট্রেক্সট এর সাথে ফলিক বা ফলিনিক এসিড ব্যবহার এর নির্দেশনা রয়েছে ।

লেফলুনোমাইডঃ
যেসব শিশু মেথোট্রেক্সেট সহ্য করতে পারেনা সেক্ষেত্রে বিকল্প হল লেফলনোমাইড। এই ঔষধটি বড়ি আকারে পাওয়া যায় এবং এর কার্যকারিতা প্রমানিত কিন্তু মেথোট্রেক্সেট এর তুলনায় ব্যয়বহুল।

স্যালাজোপাইরিন এবং সাইক্লোসপোরিনঃ
স্যালাজোপাইরিনও বাতের চিকিৎসায় একটি কার্যকরী ঔষধ কিন্তু মেথোট্রিক্সেট এর তুলনায় কম সহনশীল। মেথোট্রেক্সেট এর তুলনায় স্যালাজোপাইরিন দিয়ে চিকিৎসার অভিজ্ঞতা ও কম। অদ্যবধি অন্যান্য সম্ভাব্য কার্যকরী ঔষধ যেমন সাইক্লোসপোরিন নিয়ে কোন সঠিক গবেষনা এখনও হয়নি। স্যালাজোপাইরিন এবং সাইক্লোসপোরিন কম ব্যবহৃত হয় যেখানে জৈব ঔষধ প্রচুর পাওয়া যায়। সিসটেমিক বাতের ক্ষেত্রে যাদের ম্যাকরোফেজ একটিভেশন সিনড্রোম হয় তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্টেরয়েড এর সাথে সাইক্লোসপেরিন মূল্যবান একটি সহকারী ঔষধ। ম্যাক্রোকেজ এ্যাকটিভেশন সিনড্রোম সিস্টেমিক বাতের একটি খুবই মারাতœক এবং মৃত্যুঝুকি সম্পন্ন জটিলতা যেখানে শরীরের প্রদাহ প্রক্রিয়া মারাতœক আকারে প্রতিক্রিয়া শুরু করে।

কর্টিকোস্টেরয়েডঃ
সবচেয়ে কার্যকরী প্রদাহ নিরোধী ঔষধ হওয়া সত্ত্বেও এর ব্যবহার সীমিত কারন কর্টিকোস্টেরয়েডের কিছু কিছু দীর্ঘ স্থায়ী প্রতিক্রিয়া আছে যেমন হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া ও লম্বায় খাটো হয়ে যাওয়া। তা সত্তেও কর্টিকোস্টেরয়েড সিস্টেমিক লক্ষণ সমূহের চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে ক্ষেত্রে অন্যান্য ঔষধ অকার্যকর। মৃত্যুঝুকির সম্ভাবনা সহ অন্যান্য জটিলতার ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য ঔষধ কার্যকর হওয়ার আগে সেতু বন্ধন চিকিৎসা হিসাবে এই ঔষধ খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
কিছু স্টেরয়েড যেমন চোখের ড্রপ আইরিডোসাইক্লইসিস এর চিকিৎসায় লাগে। আরও জটিল অবস্থায় চোখের চার পাশে সিস্টেমিক স্টেরয়েড ইনজেকশন লাগতে পারে।

বায়োলজিক্যাল ঔষধ/জৈব ঔষধঃ
বিগত কয়েক বছর ধরে নতুন ধরনের ঔষধ প্রয়োগ শুরু হয়েছে যা জৈব ঔষধ বা বায়োলজিক্যাল ঔষধ বলে পরিচিত। জৈব প্রযুক্তির সাহায্য যে ঔষধ তৈরী হয় তাকে চিকিৎসকেরা জৈব ঔষধ বলেন। জৈব ঔষধ শরীরের নির্দিষ্ট কোন কনার ওপর কাজ করে। টিএনএফ বিরোধী, আইএল-১,আইএল-৬ অথবা টি সেল উদ্দীপক কণা, এরা প্রদাহ কার্যক্রমকে বন্ধু করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। শিশুদের বাতের জন্য বর্তমানে কয়েক রকম জৈব ঔষধ অনুমোদিত আছে।

টিএনএফ বিরোধী ঔষধঃ
টিএনএফ বিরোধী ঔষধ হলো যা নির্দিষ্টভাবে টিএনএফকে বাধা প্রদান করে। টিএনএফ প্রদাহ কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। এই ঔষধগুলো একা বা মেথোট্রেক্সেটের সাথে ব্যবহার করা হয় এবং অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকরী। এরা দ্রুত রোগ উপসর্গ করে এবং নিরাপদ অন্তত কয়েক বছর পর্যন্ত। এই ঔষধগুলো তবুও দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষনে রেখে দেখতে হবে কোন দীর্ঘ মেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় কিনা। শিশু বাত রোগের জন্য বায়োলজিকাল ঔষধ যেমন বিভিন্ন ধরনের টি,এন,এফ ব্লকার, সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত তবে তাদের ব্যবহার পদ্ধতি ও ব্যবহার মাত্র পৃথক হয়। যেমন ধরা যাক, ইটানারসেপ্ট চামড়ার নীচে দেওয়া হয় সপ্তাহে দুই বা এক বার। এডালিমুম্যাব চামড়ার নীচে প্রতি ২ সপ্তাহে একবার দেওয়া হয়। ইনফ্লেক্সিম্যাব মাসে ১ বার শিরা পথে প্রদান করা হয়। অন্যান্য ঔষধ যেগুলো বাচ্চাদের জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে গোলিমুম্যাব এবং ছারট্রোলিজুম্যাব পিগল), এবং অন্যান্য মলিকুল বড়দের উপর গবেষনা করা হচ্ছে যা ভবিষ্যত বাচ্চাদের জন্য ব্যবহৃত হবে।
সাধারনত টিএনএফ বিরোধী চিকিৎসা প্রায় সব ধরনের শিশু বাত রোগে ব্যবহৃত হয়। ব্যতিক্রম শুধু পারসিসটেন্ট অলিগো আরথ্রাইটিস যা সাধারনত বায়োলজিকাল এজেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করা হয় না। সিস্টেমিক জেআইএ তে ও এই ঔষধের ব্যবহার খুব একটা হয় না। সেখানে অন্যান্য বায়োলজিকাল এজেন্ট যেমন এন্টি ইন্টার লিউকিন-১ (এনাকিনরা এবং ক্যানাকিনুম্যাব) অথবা ইন্টার লিউকিন-৬ (টসিলিজুম্যাব) সাধারনত ব্যবহৃত হয়। এন্টি টিএনএফ মিথোটেক্্েরট এর সাথে ব্যবহারিত হয়। অন্যান্য দ্বিতীয় স্তরের ঔষধের মত এগুলোকেও অবশ্যই কঠিন নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হয়।

এন্টি সিটিএল ৪ আইজি (এবাটাসেপ্ট):
এবাটাসেপ্ট এমন একটি ঔষধ যার কার্যপ্রনালী ভিন্ন। এ ঔষধটি শ্বেত রক্ত কনিকা, টি লিস্ফোসাইট এর বিরুদ্ধে কাজ করে। এটা এমন সব পলিআর্থারাইটিস্ এর বাচ্চাদেরকে দেওয়া হয় যাদের মেথোট্রেক্সেট অথবা অন্যান্য বায়োলজিকাল এজেন্ট দেয়ার পর ও কোন উন্নতি হয় না।

এন্টি ইন্টারলিউকিন ১ (এনাকিনরা এবং ক্যানাকিনুম্যাব) এবং এন্টি ইন্টার লিউকিন ৬ (টসিলিজুম্যাব):
এই ঔষধ গুলো বিশেষ করে সিস্টেমিক জেআইএ চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারনত সিস্টেমিক জেআইএ এর চিকিৎসা কর্টিকোস্টেরয়েড দিয়ে শুরু করা হয়। যদিও কার্যকর কিন্তু কর্টিকোস্টেরয়েডের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষভাবে বাচ্চার বৃদ্ধির উপর। তাই অল্প সময়ের মধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রনে না আসল চিকিৎসক এন্টি ইন্টারলিউকিন ১ (এনাকিনরা অথবা ক্যানাকিনুম্যাব) যোগ করে থাকেন কয়েক মাস উপসর্গ (জ্বর) ও গিরা ব্যাথা চিকিৎসা করার জন্য। সিস্টেমিক শিশু বাত রোগের বাচ্চাদের সিস্টেমিক উপসর্গ মাঝে মাঝে এমনিতেই চলে যায় কিন্তুু গিরা ব্যাথা ও ফোলা থেকে যায়। এই ক্ষেত্রে মিথোট্রেক্সেট অথবা মিথোট্রেক্সেট এর সাথে অ্যান্টি টিএনএফ অথবা এবাটাসেপ্ট দেয়া হয়। টসিলিজুম্যাব সিস্টেমিক বা বহুগিরা আক্রান্ত বাত রোগে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা প্রথমে সিস্টেমিক ও পরে বহুগিরা আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন গবেষনা দ্বারা কার্যকরী বলে প্রমানিত হয়েছে। এটা ব্যবহার করা যেতে পারে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে যাদের মেথোট্রেক্সেট অথবা অন্যান্য বায়োলজিকাল এজেন্টে রোগ নিয়ন্ত্রন হয় না।

অন্যান্য আনুমানিক (কমপ্লিমেনটরী) চিকিৎসাঃ

রিহ্যাবিলিটেসন
রিহ্যাবিলিটেসন চিকিৎসার একটি অত্যাবশ্যকিয় অংশ। প্রয়োজনীয় ব্যায়াম একটি অত্যন্ত জরুরী বিষয়। এ ছাড়া গিড়ায় স্পিøপ্লন্ট ব্যবহার করে গিড়ার অবস্থান আরামদায়ক রাখা যা গিড়ার ব্যাথা, অসারতা, মাংসের সংকোচন, গিড়ার আকৃতি পরিবর্তন হতে দেয় না। এটা অবশ্যই তাড়াতাড়ি শুরু করতে হবে এবং নিয়ম মত করতে হবে। তাহলে গিড়ার প্রদাহে উন্নতি হবে এবং গিড়া এবং মাংসপেশী শক্তিশালী থাকবে।

অর্থপেডিক সাজার্রি (হাড়জোড়ার শৈল্য চিকিৎসা)
হাড়ের স্থায়ী বিকৃতির জন্য প্রধানত প্রয়োজন হয়, গিড়ার প্রতিস্থাপন (প্রধানত কোমড় এবং হাটু) এছাড়া রগ ঢিলা (জবষবধংব) করে দেওয়াটাও প্রয়োজন হয়ে থাকে।

আনকনভেনশনাল/কমপ্লিমেনটারী (আনুষঙ্গিক) চিকিৎসা কি ?
অনেক আনুষঙ্গিক ও বিকল্প চিকিৎসা সহজলভ্য এবং এটা রোগী ও তার পরিবারের জন্য দ্বিধা দ্বন্দের কারন। গুরুত্বপূর্ন ভাবে এই চিকিৎসার লাভ এবং ক্ষতি চিন্তা করতে হবে কারন এখানে প্রমানিত লাভ খুবই অল্প। বাচ্চার উপর অসুখের কষ্ট, সময় ও অর্থ খরচ সব বিবেচনায় নিলে এটা খরচ সাপেক্ষও বটে। খুব অল্প শিশু বাত রোগ বিশেষজ্ঞই বিকল্প চিকিৎসা করতে চায়, অবশ্যই তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। কিছু চিকিৎসা প্রথাগত ঔষধের সাথে মেলানো যায় না। বেশীর ভাগ চিকিৎসক বিকল্প চিকিৎসায় যায় না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার বাচ্চার চিকিৎসা পত্রের ঔষধ বন্ধ করা যাবে না। যখন ঔষধ যেমন স্টেরয়েডের প্রয়োজন অসুখ নিয়ন্ত্রন করার জন্য, এটা হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া খুবই বিপদজনক যেহেতু অসুখ তখনও অত্যন্ত সক্রিয়। দয়াকরে আপনার বাচ্চার চিকিৎসকের সাথে ঔষধ নিয়ে আলোচনা করুন।

কখন চিকিৎসা শুরু করতে হবে ?
এখন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় নীতিমালা আছে যা চিকিৎসক ও পরিবারকে চিকিৎসা পছন্দ করতে সাহায্য করে।
আমেরিকান কলেজ অফ রিউমাটোলজি সম্প্রতি একটি আর্ন্তজাতিক নীতিমালা প্রকাশিত করেছে (ACR at www.rheumatology.org)| পেডিয়াট্রিক রিউমাটোলজি ইউরোপিয়ান সোসাইটি (PRES at www.pres.org.uk) ও নীতিমালা তৈরী করছে।
এই নীতিমালা অনুযায়ী যেসব বাচ্চা গুরুত্বর অসুস্থ না (স্বল্প সংখ্যক গিড়ার বাত রোগ), তাদেরকে প্রাথমিক ভাবে এনএসএআইডি এবং কর্টিকোস্ট্রেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
গুরুত্বর শিশু বাত রোগের জন্য (বহু গিরা আক্রান্ত) মেথট্রেক্সিট (অথবা লিফ্লুনোমাইড কিছু ক্ষেত্রে) প্রথমে দেওয়া হয় এবং যদি এটাতে পর্যাপ্ত কাজ না হয় একটি বয়োলজিকাল এজেন্ট (প্রথমে অ্যান্টি টিএনএফ) একা অথবা মেথোট্রোক্সিটের সাথে দেয়া হয়। যে বাচ্চারা মেথট্রিক্সিট অথবা বায়োলজিকাল এজেন্ট সহ্য করতে পারে না বা কাজ হয় না তাদের জন্য অন্য বায়োলজিকাল এজেন্ট ব্যবহার করা যায় (অন্য অ্যান্টি টিএনএফ বা এবাটাসেপ্ট)

ভবিষ্যতের চিকিৎসা সম্ভাবনার জন্য বাচ্চাদের চিকিৎসার কি কোন আইনি বিধিনিষেধ আছে ?
পনের বছর আগে পর্যন্ত শিশু রোগে অথবা এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ঔষধ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষনা ছিলনা। এর অর্থ এই যে চিকিৎসকরা তাদের নিজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পত্র দিতেন অথবা যে গবেষনা বয়স্কদের উপর করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে দিতেন।
অতীতে শিশুদের বাতরোগের উপর গবেষনা করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। এর কারন ছিলঃ বাচ্চাদের উপর গবেষনার জন্য অর্থের অভাব এবং ঔষধ কোম্পানী গুলোর আগ্রহের অভাব। এই অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন হয় কয়েক বছর আগে। এর কারন হচ্ছে ইউএসএ তে Best Pharmaceuticals for Children Act এর উদ্যেগ গ্রহন করা ও ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের শিশুদের ঔষধের উপরে উন্নয়নের রেগুলেশন শুরু করে। এই উদ্যেগ গুলোই মূলতঃ ঔষধ কোম্পানীগুলোকে বাচ্চাদের ঔষধের উপর গবেষনার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন ।
ইউএসএ এ্ং ইইউ পদক্ষেপ একত্রে দুই বড় যোগাযোগ মাধ্যম দি পেডিয়াট্রিক রিউমাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল ট্রায়াল অর্গানাইজেশন (PRINTO) যা সারা বিশ্বে পঞ্চাশের অধিক দেশকে একত্রিত করে এবং দি পেডিয়াট্রিক রিউমাটোলজি কোলাবরেটিভ স্টাডি গ্রুপ (PRCSG), যা উত্তর আমেরিকাতে বাচ্চাদের বাত রোগের উন্নয়নে বিশেষভাবে শিশু বাত রোগের জন্য নতুন চিকিৎসা উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে। সারা বিশ্বে শতশত শিশু বাত রোগ আক্রান্ত বাচ্চার পরিবার যারা PRINTO ড়ৎ PRCSG কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছে তাঁরা এই চিকিৎসা গবেষনায় অংশ গ্রহন করেন। শিশু বাত রোগের চিকিৎসার জন্য গবেষনা করতেও তাঁরা মত দিয়েছেন । কখন কখন এই গবেষনায় অংশ গ্রহনে দরকার হয় প্লাসিবো ব্যবহার করা (বড়ি বা তরল যাতে কার্যকরী পদার্থ নাই) গবেষনার ঔষধের উপকারিতা এর ক্ষতিকর দিক থেকে অনেক বেশী এটা প্রমান করার জন্য।
এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষনাগুলোর কারনে এখন বিভিন্ন ঔষধ শিশু বাত রোগের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রনকারী সংস্তা যেমন খাদ্য ও ঔষধ বিভাগ (এফ ডি এ), ইউরোপিয়ান ঔষধ এজেন্সি (ইএমএ) এবং অনেক জাতীয় পর্যায়ের কতৃপক্ষ এই ক্লিনিকাল ট্রায়াল থেকে আসা বৈজ্ঞানিক তথ্য সংশোধন করেছেন এবং ঔষধ প্রস্তুতকারক কোম্পানী গুলোকে ঔষধের গায়ে এটা যে কার্যকরী এবং বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ, তা লেখার জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।
শিশু বাত রোগের জন্য ব্যবহৃত ঔষধের তালিকায় রয়েছে মেথট্রিক্সেট, ইটানারসেúট, এডালিমুম্যাব, এবাটাসেপ্ট, টসিলিজুম্যাব এবং ক্যানাকিনুম্যাব।
বিভিন্ন ঔষধ নিয়ে এখন বাচ্চাদের উপর গবেষনা করা হচ্ছে। তাই আপনার বাচ্চাকেও তার চিকিৎসক এই ধরনের গবেষনায় অংশগ্রহন করতে বলতে পারেন।
কিছু ঔষধ আনুষ্ঠানিকভাবে শিশু বাত রোগে ব্যবহারের জন্য অনুমতি পায় নাই যেমন অনেক নন স্টেরয়ডাল এন্টি ইনফ্লামেটরী ঔষধ, এজাথাওপিরিন, সাইক্লোসপরিন, এনাকিনরা, ইনফ্লিক্সিম্যাব, গোলিমুম্যাব এবং সোরটলিমুম্যাব। এই ঔষধ গুলো প্রয়োগের অনুমতি ছাড়াও ব্যবহার করা যায় (বলা হয় অফ লেভেল ব্যবহার) এবং আপনার চিকিৎসক এটা ব্যবহারের প্রস্তাব দিতে পারে যদি অন্য কোন সহজলোভ্য চিকিৎসা না থাকে।

এই চিকিৎসার প্রধান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি ?
শিশু বাত রোগে ব্যবহৃত ঔষধগুলি সাধারনত অত্যন্ত সহনশীল। খাদ্যনালীর অসহনশীলতা সব চাইতে প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এনএসএআইডি এর (তাই এটা খাবারের পর খেতে হয়)। এই সমস্যা বড়দের থেকে বাচ্চাদের কম হয়। এন এস এ আই ডি রক্তে যকৃতের এনজাইম এর পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারে তবে এসপিরিন ছাড়া অন্য ঔষধে এটা হয না বললেই চলে।
মেথোট্রিক্সেট ও খুব সহনশীল ঔষধ। পাকস্থলি ও খাদ্যনালীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ যেমন বমি ভাব ও বমি হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষন করার জন্য রক্তে যকৃতের এনজাইম পর্যবেক্ষন করা দরকার। রক্তে যকৃতের এনজাইম এর মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে ঔষধের মাত্রা কমিয়ে বা ঔষধ বন্ধ করে নিয়ন্ত্রন করা হয়। ফলিনিক বা ফলিক এসিড ব্যবহার করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাইপারসেনসিটিভিটি রিয়্যাকসেন মেথট্রিক্সিটে সাধারনত খুব কম হয়।
স্যালাজোপাইরিন মোটামুটি একটি ভালো সহনশীল ঔষধ। সবচেয়ে বেশী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে চামড়ায় দানা, পাকস্থলি ও খাদ্যনালীর সমস্যা, হাইপারট্রান্সএমাইনেজ (যকৃত ক্ষতিকারক) , লিউকোপেনিয়া (শ্বেত রক্ত কনিকা কমে যাবে যাতে ইনফেকশন হতে পারে)। তাই মেথটিক্সিট্রের মতই কিছু অত্যাবশ্যকীয় পরীক্ষার প্রয়োজন।
দীর্ঘদিন বেশী মাত্রার কর্টিকোস্টেরয়েড এর ব্যবহার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সাথে জড়িত। উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ ধীর বৃদ্ধি ও অসটিওপোরোসিস। বেশী মাত্রার কটিকোস্টেরয়ের ব্যবহারে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় যা পরবর্তীতে স্থুলতার দিকে নিয়ে যায়। তাই বাচ্চাদের এমন খাবার খেতে উৎসাহিত করা উচিত যা বেশী ক্যালরী গ্রহন করা ছাড়াই তাদের ক্ষুধা নিবারন করে।
বায়োলজিকাল এজেন্ট সহজে গ্রহন যোগ্য অন্ততঃ চিকিৎসার প্রাথমিক বছর গুলোতে। রোগীকে গুরুত্বপূর্ণভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেকোন ইনফেকশন ও ক্ষতিকর ব্যাপারে। যদিও এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যে সকল ঔষধ শিশু বাত রোগে ব্যবহৃত হয় তার অভিষ্ণতা অনেক কম (শুধু কয়েক শত বাচ্চার উপর গবেষনা কৃত) এবং স্বল্পকালীন সময়ে (বায়োলজিকাল এজেন্ট ২০০০ সাল হতে সহজ লভ্য), এই কারনে বিভিন্ন শিশু বাত রোগ রেজিস্ট্রারিস জাতীয় পর্যায়ে বায়োলজিকাল ঔষধ পাওয়া বাচ্চাদের পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষন করছে। (জার্মানী, ইউনাইটেড কিংডম, ইউএসএ এবং অন্যান্য দেশ) এবং আন্তজাতিক পর্যায়ে (ফার্মা চাইড, এটা =PRINTO= ও এবং =PRES= দ্বারা পরিচালিত প্রজেক্ট, শিশু বাত রোগ বাচ্চাদের নিবির পর্যবেক্ষনে রাখা এই গবেষনার উদ্দেশ্য। কারন অনেক বছর পরও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কত দিন চিকিৎসা চলবে ?
যতদিন রোগ থাকবে চিকিৎসা চলবে। অসুখ কত দিন থাকবে তা ধারনা করা যায় না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ২/১ বছর থেকে অনেক বছরের মধ্যে শিশু বাত রোগ এমনিতেই ভাল হযে যায়। শিশু বাতের চরিত্রই হচ্ছে মাঝে মাঝে কমে যাবে এবং বৃদ্ধি পাবে। যে কারনে চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রয়োজন। চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া হবে অবশ্যই যখন গিরা ব্যাথা অনেক দিন ধরে থাকবে না (ছয় হতে বার মাস বা তারও বেশী) যদিও ঔষধ বন্ধ করার পর আবার হবে না এর যথাযথ তথ্য কোথাও নেই। চিকিৎসকরা গিরা ব্যাথা না থাকলেও বড় হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের শিশু বাত রোগের জন্য ফলো আপ করে থাকেন।

চক্ষু পরীক্ষা (স্লিট ল্যাম্প এক্সামিনেশন) কত দিন পর পর এবং কত দিন পর্যন্ত?
যে রোগিদের এএনএ পজেটিভ হয় তাদের ঝুকি বেশী তাই প্রতি তিন মাস অন্তর স্লিট ল্যাম্প পরীক্ষা করতে হয়। যাদের আইরাইডোসাইক্লাইটিস হয় তাদের আরো তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করতে হয় যা আক্রান্ত চোখ এর ভয়াভয়তার উপর নির্ভর করে ।
আইরাইডোসাইক্লোইস্টিস হওয়ার প্রবনতা সময়ের সাথে সাথে কমে যায় যদিও গিরা ব্যাথা হওয়ার বহু বছর পরও আইরাইডোসাইক্লোইটিস হতে পারে। তাই গিরা ব্যাথা চলে গেলেও বহু বছর পর্যন্ত চক্ষু পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে।
একিউট ইউভাইটিস, যা গিরা ব্যাথা ও রগ ব্যাথা রোগীর হতে পারে, তা উপসর্গযুক্ত (লাল চোখ, চোখ ব্যাথা, আলোতে সমস্যা)। যদি এ সমস্ত অভিযোগ থাকে দরকারে দ্রুত চক্ষু বিশেষ্ণর কাছে পাঠাতে হবে। আইরাইডোসাইক্লাইটিস এর মত রোগ নির্ণয়ের জন্য এ ক্ষেত্রে স্লিট ল্যাম্প এক্সামিনেশনের প্রয়োজন নাই।

গিড়া ব্যাথার সুদীর্ঘ ভবিষ্যতের ফলাফল কি ?
বহু বছর ধরে গিড়া ব্যাথার ভবিষ্যৎ ফলাফল উন্নতি লাভ করেছে তবুও এখনো এটা শিশু বাত রোগের তীব্রতা , প্রকৃতি ও সঠিক এবং তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করার উপর নির্ভর করে। নতুন ঔষধ ও বায়োলজিক্যাল এজেন্ট তৈরী করার জন্য এবং সকল শিশুর জন্য চিকিৎসা সহজলভ্য করার জন্য এখনো গবেষনা চলছে। গিড়া ব্যাথার ভবিষ্যৎ ফলাফল গত দশ বছরে প্রচুর উন্নতি লাভ করেছে। মোটামোটি চল্লিশ ভাগ (৪০%) শিশুর চিকিৎসা বন্ধ করার ৮ হতে ১০ বছর পর্য়ন্ত উপসর্গ দেখা দেয় নাই। সবচেয়ে বেশী রোগ নিয়ন্ত্রনে থাকে স্থায়ী স্বল্প সংখ্যক গিরার বাত রোগে এবং সিস্টেমিক রোগে।
সিস্টেমিক শিশু বাত রোগের ভবিষ্যত ফলাফল বিভিন্ন রকমের হতে পারে। প্রায় অর্ধেক রোগীর গিরা ব্যাথার উপসর্গ কম থাকে তবে, সময়ে সময়ে এই রোগে বেড়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত ভবিষ্যত ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই ভাল যেহেতু তাড়াতাড়ি রোগটা নিজেই নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। বাকি অর্ধেক রোগীর ক্ষেত্রে রোগের চরিত্র হচ্ছে স্থায়ি গিরা ব্যাথা। সিস্টেমিক উপসর্গ দুর হতেও অনেক বছর সময় লেগে যায়, কিন্তু রোগীর অস্থি সন্ধি নষ্ট হয়ে যায়। শেষ পর্যš,Í এই ভাগের অল্প কিছু রোগীর সিস্টেমিক উপসর্গ স্থায়ি হয় গিড়ার ব্যাথার সঙ্গে। এসব রোগীর ভবিষ্যত ফলাফল খুব খারাপ। এমাইলয়ডোসিস ও হতে পারে। যার জন্য ইমিউনো সাপ্রেসিভ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বায়লজিকাল চিকিৎসার উন্নতির ফলে অ্যান্টি আই এল-৬ (টসিলিজুম্যাব) এবং আই এল-১ (এনাকিনরা এবং ক্যানাকিনুম্যাব) এর কারনে এখন ফলাফলের উন্নতি পাওয়া যায়।
আর এফ পজেটিভ বহুগিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ একটি ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া গিড়ার সমস্যা যা অস্থি সন্ধির ব্যাপক ক্ষতি করে। বাচ্চাদের এই প্রকৃতিটা বড়দের রিউমাটয়েড ফ্যাক্টর (আর এফ) পজেটিভ রিউমাইয়েড গিড়া বাতের সাথে সম্পৃক্ত।
আর এফ নেগেটিভ বহু গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ উপসর্গ এবং ভবিষ্যতের ফলাফলের দিক হতে মিশ্র প্রকৃতির। যদিও সমষ্টিগত ভাবে আর এফ পজেটিভ বহু গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত হতে এর ভবিষ্যত ফলাফল ভাল। এদের মধ্যে প্রায় এক-চর্তুয়াংশ রোগী অস্থি সন্ধির ক্ষতির সমুক্ষিন হন।
স্বল্প গিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগ যদি সীমিত গিড়ায় থাকে তবে গিড়ার ভবিষ্যত ফলাফল ভাল (তাকে স্থায়ী স্বল্প গিড়ার বাত বলে)। যে সকল রোগীর গিড়ার রোগ বর্ধিত হয়ে আরো অন্যান্য গিড়া আক্রান্ত করে (বর্ধনশীল স্বল্প গিড়ার বাত) তাদের ভবিষ্যতের ফলাফল আর এফ নেগেটিভ বহুগিড়া আক্রান্ত শিশু বাত রোগের মতই।
অনেক সোরিয়াটিক শিশু বাত রোগীর রোগটা স্বল্প গিড়া আক্রান্ত শিশু বাতের মত। আবার কারোটা বড়দের সোরিয়াটিক বাতের মত।
শিশু বাত রোগ যাদের সাথে এনথেসাইটিস জড়িত তাদেরও ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন। কিছু রোগীর রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে থাকে। অন্যদের রোগ বেড়ে গিয়ে মেরুদন্ডের স্যাকরোইলিয়াক সন্ধি আক্রান্ত হয়।
বর্তমানে রোগের শুরুর দিকে কোন নির্ভরযোগ্য উপসর্গ বা ল্যাবরেটরি ফলাফল দিয়ে ভবিষ্যৎ ফলাফল আন্দাজ করা যায় না। আর তাই, চিকিৎসকরাও ধারনা করতে পারে না কোন রোগীর ভবিষ্যত ফলাফল খারপ হবে। এসব নির্ধারকের যথেষ্ট ক্লিনিক্যাল গুরুত্ব আছে। কারন ভবিষ্যৎ ফলাফল বোঝা গেলে, চিকিৎসক শুরু থেকেই চিহ্নিত করতে পারেন, রোগের শুরু হতেই শক্তিশালী আক্রমন মূলক চিকিৎসা লাগবে । মেথটিক্সিট অথবা বায়োলজিকাল এজেন্ট কখন বন্ধ করতে হবে তার জন্য ল্যাবরেটরি নিধারক এর উপর গবেষনা করা হচ্ছে।

এবং আইরাইডোসাইক্লাইটিস সমন্ধে করনীয় ?
আইরাডোসাইক্লাইটিস যদি চিকিৎসা করা না হয় তার গুরুতর সমস্যা হতে পারে যেমন চোখের লেন্স খোলাটে হয়ে যাওয়া (ক্যাটারেক্ট) এবং অন্ধত্ব। যদি শুরুতেই চিকিৎসা করা হয় এ সকল উপসর্গ সাধারনত দুর হয়ে যায়। চোখের প্রদাহ দুর করার জন্য এবং মনি প্রসারিত করার জন্য চোখে ঔষধ ড্রপ হিসাবে ব্যবহৃত হয। যদি ঔষধের ড্রপ ব্যবহার করে উপসর্গ নিয়ন্ত্রনে না আসে বায়োলজিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। এক বাচ্চা হতে অন্য বাচ্চার প্রতিক্রিয়া ভিন্ন তাই মারাতœক আইরাইডোসাইক্লাটিস চিকিৎসার পরিষ্কার বর্নণা নথিপত্রে বা গবেষনা পত্রে নাই। তাড়াতাড়ি রোগ নির্ধারন করতে পারার উপরই মুলত ভবিষ্যতের ফলাফল নির্ভর করে। অনেক দিন ধরে কর্টিকোস্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করার জন্যও ক্যাটারেক্ট হতে পারে বিশেষ ভাবে সিস্টেমিক কিশোর বাত রোগীদের।


প্রতিদিনের জীবনঃ

খাদ্যভাস কি রোগের গতিতে প্রভাব ফেলতে পারে?
রোগের উপর খাদ্যাভাসের প্রভাবের কোন প্রমান নাই। সাধারন ভাবে বাচ্চাকে তার বয়স উপযোগী আদর্শ খাবার দিতে হবে। কর্টিকোস্টেরয়েড খাচ্ছে এমন রোগীকে বেশী খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে, যেহেতু ঔষধটা খাবার রুচি বাড়য়। কর্টিকোস্টেরয়েড চিকিৎসা নেওয়ার সময় বেশী শক্তিযুক্ত ও লবনাক্ত খাবার হতে বিরত থাকতে হবে যদি বাচ্চা অল্প ঔষধ খায় তারপরেও।

জলবায়ু কি রোগে গতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে?
রোগ প্রকাশের উপর জলবায়ুর প্রভাবের কোন প্রমান নাই। যদিও সকালবেলার গিড়ার শক্তভাব শীতকালে দীর্ঘক্ষন থাকতে পারে।

শরীর চর্চা ও ফিজিক্যাল থেরাপি কি দরকার?
শরীর চর্চা ও ফিজিক্যাল থেরাপির উদেশ্য হল বাচ্চাকে তার দৈনদিন কাজে ও সামাজিক কাজে স্বাভাবিকভাবে অংশগ্রহন করানো। শরীর চর্চা ও ফিজিক্যাল থেরাপি সুস্থ জীবন যাপনের জন্য উৎসাহিত করা হয়। এই লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য সুস্থ স্বাভাবিক গিড়া ও মাংস পেশী একটি পূর্বশর্ত। শরীর চর্চা ও ফিজিক্যাল থেরাপি ব্যবহার করে গিড়ার নড়াচড়া, গিড়ার স্বায়িত্ব, মাংসপেশীর নড়াচড়া, মাংসপেশীর শক্তি স্বাভাবিক রাখা যায়। কর্মক্ষমতার জন্য মাংস ও হাড়ের সুস্বাস্থ্য অত্যন্ত জরুরি। বাচ্চাকে সফল ভাবে এবং সর্তক ভাবে স্কুলের কাজে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে যেমন অবসর সময় কাজ বা খেলাধুলাতে উৎসাহিত করতে হবে। সঠিক চিকিৎসা এবং বাসায় শরীর চর্চা শক্তি ও সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে।

খেলাধুলা কি করা যাবে ?
সুস্থ বাচ্চার জীবনে প্রতিদিন খেলাধুলা করা অত্যাবশ্যকীয়। শিশু বাত রোগ চিকিৎসার একটা লক্ষ্য হলো বাচ্চাকে স্বাভাবিক জীবন ধারন করতে দেওয়া এবং যত টুকু সম্ভব তাকে অন্য বাচ্চা থেকে আলাদা না ভাবা। এ সবের জন্য প্রয়োজন বাচ্চাকে খেলাধুলা অংশ গ্রহন করতে দেওয়া এবং এটা বিশ্বাস করা যে, গিরা ব্যাথা করলেও তা ভালো হয়ে যাবে। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীর চর্চা শিক্ষককে উপদেশ দিতে হবে যে, খেলাধুলার সময় ইনজুরী প্রতিরোধ করার জন্য। যদিও ইনফ্লামন্ড গিরার জন্য থেলাধুলা উপকারী না তবুও রোগের জন্য বাচ্চাকে তার বন্ধুদের সাথে খেলতে না দিলে যে পরিমান মানসিক চাপ পড়বে তার থেকে এই ব্যথার চাপ অনেক কম। সাধারন ভাবে এই ধারনা বাচ্চাকে উৎসাহিত করবে, তাকে নিজের ইচ্ছে মতো এবং নিজেকে রোগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতেও সাহায্য করবে।
এছাড়া এটা আরো ভাল বাচ্চাকে এমন সব খেলাধুলা করানো যাতে মেকানিকাল চাপ কম বা নাই। যেমন সাতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি।

বাচ্চা কি নিয়মিত স্কুলে যেতে পারবে ?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে বাচ্চা নিয়মিত স্কুলে যাবে। গিড়া শক্ত হয়ে যাওয়া স্কুলে উপস্থিতির জন্য একটা সমস্যা। এর কারনে হাটার সমস্যা, দুর্বলতা, ব্যথা, নাড়াতে না পারা ও সহ্য ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে স্কুলের সদস্য ও বাচ্চাদের তার সমস্যা সমন্ধে জানা, যাতে করে তাকে নড়াচড়ার সুবিধাঃ আর্গোনমিক আসবাব, হাতের লেখা বা যন্ত্রের লিখনের জন্য মালামাল দেওয়া হয়। রোগের স্বক্রিয়তার উপর নির্ভর করে তাকে পড়াশুনা ও খেলাধুলার অংশগ্রহনে উৎসাহিত করতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে স্কুলের সদস্যদের শিশু বাত রোগ সমন্ধে জানতে হবে। তাদের সজাগ থাকতে হবে রোগের প্রকৃতি সমন্ধে এবং ধারনার বাইরেও রোগের বাড়াবাড়ি হতে পারে তার ব্যাপারেও শিক্ষককে জানতে হবে। বাচ্চার জন্য কি প্রয়োজনীয় : ভাল টেবিল, গিড়ার সন্ধির অসারতা দুর করার জন্য বারবার নড়াচড়া করা ও হাতের লেখার সমস্যা । যখন সম্ভব তখন শরীর চর্চা ক্লাসে উপস্থিত থাকা উচিত। এক্ষেত্রে শরীর চর্চার ক্ষেত্রে যেসমস্ত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেগুলো অভিভাবককে নজর রাখতে হবে।
বড়দের জন্য কর্মক্ষেত্র যেমন, বাচ্চাদের জন্য স্কুল তেমনই জরুরী। এখানে সে শিখতে পাড়বে কিভাবে নিজের কাজ নিজে করতে হয়। এ বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে যে, সে কিছু দিতে পারবে এবং স্বনির্ভর। বাবা মা এবং শিক্ষকদের অবশ্যই কিছু করা উচিত। অসুস্থ্য বাচ্চাদেও যাতে শিক্ষা কার্যক্রমে স্বাভাবিক ভাবে অংশগ্রহন করানো যায় ও যাতে সফলতা আসে। বড়দের সাথে এবং সমবয়সিদের সাথে যোগাযোগের দক্ষতাকে গ্রহনযোগ্য করতে হবে এবং উৎসাহিত করতে হবে।

টিকা কি দেওয়া যাবে ?
যে সকল রোগী ইমিউনো সাপ্রেসিভ চিকিৎসা (কর্টিকোস্টেরয়েড, মেথট্রিক্সিট, বায়োলজিকাল এজেন্ট) পায়, লাইভ অ্যাটিনুয়েটেড মাইক্রোঅর্গানিজম আছে। এমন টীকা (যেমন রুবেলা, হাম, প্যারোটাইটিস, পোলিও স্যাবিন এবং বিসিজি) অবশ্যই স্থগিত করতে হবে অথবা বন্ধ করতে হবে কারন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারনে তাদের টীকা থেকে ইনফেকসন ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারনত এই সব টিকা কর্টিকোস্টেরয়েড, মেথটিক্সিট ও বায়োলজিক্যাল এজেন্ট দিয়ে চিকিৎসা শুরুর আগে দেওয়া হয়। যে সমস্ত টিকাতে জীবিত মাইক্রোঅর্গানিজম থাকে না কিন্তু শুধু ইনফেকসাস আমিষ অংশ থাকে যেমনঃ (অ্যান্টি টিটেনাস, অ্যান্টি ডিপথেরিয়া, অ্যান্টি পোলিও স্যাল্ক, অ্যান্টি হেপাটাইটিস বি অ্যন্টি পারটুসিস, নিউমোকক্কাস, হিমোফাইলস, মেনিনগোকক্কাস) এসব টীকা দেয়া যেতে পারে। ইমিউনোসাপ্রেসিভ অবস্থার জন্য টিকার কার্যকারীতা হারাতেও পারে। তবে, বাচ্চাদের জন্য টিকার তালিকা মানতে হবে সামান্য রদ বদল করে হলেও।

বাচ্চা কি বড় হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে ?
এটা চিকিৎসার একটা মূল লক্ষ্য এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। নতুন ঔষধের সাথে সাথে শিশু বাত রোগের চিকিৎসারও অনেক নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো ভাল হবে। ঔষধের সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং রিহ্যাবিলিটেশন এখন বেশীর ভাগ রোগীই গিড়ার ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।
রোগাক্রান্ত বাচ্চা ও তার পরিবারের মানসিক চাপের উপর ও নজর রাখতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন শিশু বাত রোগ পুরো পরিবারের জন্যই একটি কঠিন চ্যালেজ্ঞ এবং রোগটা যত গুরুতর তার সাথে মানিয়ে নেয়াটা ততই কঠিন। যদি বাবা মা মানিয়ে নিতে না পারে, বাচ্চাদের জন্য অসুখের সাথে মানিয়ে চলা আরো কঠিন হয়ে যায়। বাবা মার বাচ্চার সাথে নিবিড় বন্ধন থাকে। তাই বাচ্চাকে যেকোন ধরনের সমস্যা হতে বাবা মাকেই প্রতিরোধ করতে হবে।
পিতামাতার (যারা কিনা বাচ্চাকে স্বনির্ভর হতে সাহস নিয়ে থাকেন এবং সহযোগীতা করে থাকেন) গঠন মুলক দৃষ্টিভঙ্গি বাচ্চার অসুস্থতা সত্ত্বেও তাকে এই কষ্ট লাঘব করতে, তাদের সঙ্গিদের সাথে মেলামেশা করতে এবং স্বনির্ভর ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালনে সাহায্য করে।
প্রয়োজন অনুযায়ী বাচ্চাদের মানসিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বাত রোগ টীমের সদস্যদের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিভিন্ন পরিবারিক সংঘ ও দাতব্য সংস্থাসমূহ এই পরিবার গুলোকে রোগের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।


 
সাহায্যকারী
This website uses cookies. By continuing to browse the website you are agreeing to our use of cookies. Learn more   Accept cookies