কাওয়াসাকি ডিজিজ  


বিবরণ 2016
diagnosis
treatment
causes
Kawasaki Disease
কাওয়াসাকি ডিজিজ
টোমিসাকু কাওয়াসাকি নামের শিশু বিশেষজ্ঞ সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে ইংরেজী চিকিৎসা বিষয়ক রচনায় এই রোগের নাম উল্লেখ করেন (রোগটি তার নামে নামকরন করা হয়েছে) তিনি লক্ষ্য করেন যে কিছু শিশুর জ্বর, চামড়ায় দানা, চোখের প্রদাহ (লাল চোখ) ইনানথেম (গলা ও মূখ গহবর লাল), হাত, পা ফোলা এবং গলায় বড় লিস্ফ গ্রহ্নি আছে। প্রথমে এই রোগকে মিউকোকিউটেনিয়াস লিস্ফ নোড সিনড্রোম বলা হতো। কয়েকবছর পরে হৃৎপিন্ড জটিলতা যেমন করোনারী ধমনী এনিউরিজম (রক্তনালীর অস্বাভাবিক প্রসারন) উল্লেখিত হয়। কাওয়াসকি ডিজিজ একধরনের তীব্র রক্তনালীর প্রদাহ যার অর্থ রক্তনালীর প্রাচীন প্রদাহ যা পরবর্তীতে শরীরে মাঝারী ধমনীকে প্রসারিত করে। প্রাথমিক ভাবে হৃৎপিন্ডের ধমনী, যাহোক অধিকাংশ শিশুর হৃৎপিন্ডের জটিলতা ব্যাতীত অন্যান্য তীব্র উপসর্গগুলোই বেশী দেখা যায়। এটা কতটা সাধারন? কাওয়াসাকি ডিজিজ একটি বিরল রোগ, হেনোকশোলেন পারপুরার মতই সাধারন শৈশবের রক্তনালীর প্রদাহ। কাওয়াসাকি ডিজিজ পৃথিবীর সবদেশেই পাওয়া যায় যদিও জাপানে সবচেয়ে বেশী। ডিজিজ ৫ বছরের নীচের বাচ্চাদের হয়। সবচেয়ে বেশী হয় ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়সে। ৩ মাসের নীচে বা পাঁচ বছরের উপরে এই রোগ সাধারনত হয় না কিন্তু হলে হৃৎপিন্ডের ধমনী প্রসারনের ঝুঁকি বেশী থাকে। এটা মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশী হয়। যদিও কাওয়াসাকি ডিজিজ বছরে যেকোন সময়ই হতে পারে তবে শীতকালের শেষে এবং বসন্ত ঋতুতে এটা বেশী দেখা যায়। এই রোগের কারন কি ? কাওয়াসাকি ডিজিজ এর কারন অজানা, যদিও জীবানু সংক্রমনের কারনে এটা হতে পারে । সম্ভবত জীবানুর (কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস) প্রতি অতি সংবেদনশীলতা বা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অকার্যকারিতার কারনে প্রদাহ শুরু হয়ে রক্তনালীর ক্ষতি হয়। এটা কি জন্মগত রোগ ? আমার বাচ্চার কেন এই রোগ হলো? এটা কি প্রতিরোধ করা যায় ? এটা কি ছোয়াচে ? জিনগত ভূমিকা আছে ধারনা করা হলেও এটা জন্মগত রোগ নয়। পরিবারের একাধিক সদস্যের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন। এটা ছোয়াচে না এবং এক বাচ্চার থেকে অন্য বাচ্চার হয় না। এখন পর্যন্ত এই রোগ প্রতিরোধের কোন উপায় জানা নেই। একই রোগীর এই রোগ দ্বিতীয়বার হবার সম্ভাবনা প্রায় ক্ষীন। প্রধান উপসর্গগুলো কি ? রোগটি ব্যাখ্যাতীত জ্বর দিয়ে শুরু হয়। শিশু সাধারনত খুব খিটখিটে থাকে। জ্বরের সাথে বা পরে চোখের কনজিংটিভা সংক্রমন (দুই চোখ লাল) হতে পারে। শিশুর চামড়ায় বিভিন্ন ধরনের দানা হতে পারে। যেমন-হাম বা স্কারলেট ফিভার এর যত দানা, চুলকানী, প্যাপিউল ইত্যাদি। চামড়ার দানা প্রথমে শরীরে বা হাতে পায়ে এবং কখনো কখনো ডায়াপার পরানো স্থানে হতে পারে যা পরবর্তীতে লাল হয় এবং চামড়া উঠে যায়। মুখের পরিবর্তনের মধ্যে আছে উজ্জল লাল, ফাটা ঠোঁট, লাল জিহবা (সাধারনভাবে স্ট্রবেরী জিহবা বলা হয়) এবং গলার ভিতর লাল হওয়া, হাত ও পাও আক্রান্ত হতে পারে যেমন হাত ও পায়ের পাতা লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া। হাত ও পায়ের আঙ্গুলে পানি জমে ফুলে যেতে পারে। পরবর্তীতে হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে চামড়া উঠে যেতে পারে (প্রায়, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহ)। অর্ধেকেরও বেশী রোগীর গলার লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়। সাধারনত একটি গ্রন্থি ফুলে ওঠে যা অন্তত ১
evidence-based
consensus opinion
2016
PRINTO PReS
কাওয়াসাকি ডিজিজ কি ?
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
দৈনন্দিন জীবন



কাওয়াসাকি ডিজিজ কি ?

এটা কি ?
টোমিসাকু কাওয়াসাকি নামের শিশু বিশেষজ্ঞ সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে ইংরেজী চিকিৎসা বিষয়ক রচনায় এই রোগের নাম উল্লেখ করেন (রোগটি তার নামে নামকরন করা হয়েছে) তিনি লক্ষ্য করেন যে কিছু শিশুর জ্বর, চামড়ায় দানা, চোখের প্রদাহ (লাল চোখ) ইনানথেম (গলা ও মূখ গহবর লাল), হাত, পা ফোলা এবং গলায় বড় লিস্ফ গ্রহ্নি আছে। প্রথমে এই রোগকে মিউকোকিউটেনিয়াস লিস্ফ নোড সিনড্রোম বলা হতো। কয়েকবছর পরে হৃৎপিন্ড জটিলতা যেমন করোনারী ধমনী এনিউরিজম (রক্তনালীর অস্বাভাবিক প্রসারন) উল্লেখিত হয়।
কাওয়াসকি ডিজিজ একধরনের তীব্র রক্তনালীর প্রদাহ যার অর্থ রক্তনালীর প্রাচীন প্রদাহ যা পরবর্তীতে শরীরে মাঝারী ধমনীকে প্রসারিত করে। প্রাথমিক ভাবে হৃৎপিন্ডের ধমনী, যাহোক অধিকাংশ শিশুর হৃৎপিন্ডের জটিলতা ব্যাতীত অন্যান্য তীব্র উপসর্গগুলোই বেশী দেখা যায়।

এটা কতটা সাধারন?
কাওয়াসাকি ডিজিজ একটি বিরল রোগ, হেনোকশোলেন পারপুরার মতই সাধারন শৈশবের রক্তনালীর প্রদাহ। কাওয়াসাকি ডিজিজ পৃথিবীর সবদেশেই পাওয়া যায় যদিও জাপানে সবচেয়ে বেশী। ডিজিজ ৫ বছরের নীচের বাচ্চাদের হয়। সবচেয়ে বেশী হয় ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়সে। ৩ মাসের নীচে বা পাঁচ বছরের উপরে এই রোগ সাধারনত হয় না কিন্তু হলে হৃৎপিন্ডের ধমনী প্রসারনের ঝুঁকি বেশী থাকে। এটা মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশী হয়। যদিও কাওয়াসাকি ডিজিজ বছরে যেকোন সময়ই হতে পারে তবে শীতকালের শেষে এবং বসন্ত ঋতুতে এটা বেশী দেখা যায়।

এই রোগের কারন কি ?
কাওয়াসাকি ডিজিজ এর কারন অজানা, যদিও জীবানু সংক্রমনের কারনে এটা হতে পারে । সম্ভবত জীবানুর (কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস) প্রতি অতি সংবেদনশীলতা বা রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অকার্যকারিতার কারনে প্রদাহ শুরু হয়ে রক্তনালীর ক্ষতি হয়।

এটা কি জন্মগত রোগ ? আমার বাচ্চার কেন এই রোগ হলো? এটা কি প্রতিরোধ করা যায় ? এটা কি ছোয়াচে ?
জিনগত ভূমিকা আছে ধারনা করা হলেও এটা জন্মগত রোগ নয়। পরিবারের একাধিক সদস্যের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন। এটা ছোয়াচে না এবং এক বাচ্চার থেকে অন্য বাচ্চার হয় না। এখন পর্যন্ত এই রোগ প্রতিরোধের কোন উপায় জানা নেই। একই রোগীর এই রোগ দ্বিতীয়বার হবার সম্ভাবনা প্রায় ক্ষীন।

প্রধান উপসর্গগুলো কি ?
রোগটি ব্যাখ্যাতীত জ্বর দিয়ে শুরু হয়। শিশু সাধারনত খুব খিটখিটে থাকে। জ্বরের সাথে বা পরে চোখের কনজিংটিভা সংক্রমন (দুই চোখ লাল) হতে পারে। শিশুর চামড়ায় বিভিন্ন ধরনের দানা হতে পারে। যেমন-হাম বা স্কারলেট ফিভার এর যত দানা, চুলকানী, প্যাপিউল ইত্যাদি। চামড়ার দানা প্রথমে শরীরে বা হাতে পায়ে এবং কখনো কখনো ডায়াপার পরানো স্থানে হতে পারে যা পরবর্তীতে লাল হয় এবং চামড়া উঠে যায়।
মুখের পরিবর্তনের মধ্যে আছে উজ্জল লাল, ফাটা ঠোঁট, লাল জিহবা (সাধারনভাবে স্ট্রবেরী জিহবা বলা হয়) এবং গলার ভিতর লাল হওয়া, হাত ও পাও আক্রান্ত হতে পারে যেমন হাত ও পায়ের পাতা লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া। হাত ও পায়ের আঙ্গুলে পানি জমে ফুলে যেতে পারে। পরবর্তীতে হাত ও পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে চামড়া উঠে যেতে পারে (প্রায়, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহ)। অর্ধেকেরও বেশী রোগীর গলার লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়। সাধারনত একটি গ্রন্থি ফুলে ওঠে যা অন্তত ১.৫ সেমি এর চেয়ে বড় হয়।
কখনো কখনো অন্যান্য উপসর্গ যেমন গিড়া ব্যথা এবং গিড়া ফোলা, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, খিটখিটে বা মাথা ব্যথা হতে পারে। যেসব দেশে বিসিজি টিকা দেয়া হয় (যক্ষা প্রতিরোধের জন্য) সেসব দেশে ছোট শিশুদের টিকার দাগের স্থানে লাল হতে দেখা যায়।
কাওয়াসাকি ডিজিজ এর সবচেয়ে মারাতœক জটিলতা হলো হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হওয়া। হৃৎপিন্ডে মারমার, রিদমে সমস্যা ও আলট্রাসনোগ্রামে অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে। হৃৎপিন্ডের বিভিন্নস্তরে কিছু প্রদাহ হতে পারে যেমন পেরিকার্ডাইটিস (হৃৎপিন্ডের বাইরের আবরনের প্রদাহ) মায়োকার্ডাইটিস (হৃদপেশীর প্রদাহ) এবং এমনকি র্ভাল্ব আক্রান্ত হতে পারে। যাহোক প্রধান উপসর্গ হলো করোনারী ধমনী প্রসারন।

রোগটি কি সব শিশুদের একই রকম হয় ?
এক শিশু হতে অন্য শিশুতে রোগের তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে। সব শিশুরই সব উপসর্গ দেখা যায় না এবং অধিকাংশ শিশুর হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয় না। রক্তনালীর প্রসারন প্রতি ১০০টি বাচ্চার মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৬জনের মধ্যে দেখা যায়। কিছু শিশুর (বিশেষভাবে যাদের বয়স ১ বছরের নীচে) সম্পূর্ন উপসর্গ দেখা যায় যার মানে হলো তাদের সব উপসর্গ প্রকাশ পায় না যার ফলে রোগ নির্ণয় খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কারো কারো রক্তনালীর অস্বাভাবিক প্রসারন দেখা যায়। এদের এটিপিকাল কাওয়াসাকি ডিজিজ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

রোগটি কি শিশুদের ক্ষেত্রে বড়দের ধেকে আলাদা ?
এটা মূলত শিশুদেরই রোগ যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিনত বয়সেও এটা দেখা যাচ্ছে।


রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

কিভাবে রোগটি নির্ণয় করা যায় ?
কাওয়াসাকি রোগ একটি রোগ এর সাথে রোগটি চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করেন। রোগটি নিশ্চিত করা হয় যদি ব্যাখ্যাতীত জ্বর পাঁচদিন বা তার বেশী থাকে এবং নিচের ৫টি উপসর্গের ৪টি থাকে। যেমন-(দুই চোখের প্রদাহ চোখের আবরনের প্রদাহ)। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত লসিকা গ্রন্থি, চামড়ায় দানা। মূখ জিহবা এবং হাত ও পায়ের পরিবর্তন। চিকিৎসক বিবিধ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন যে অন্য কোন রোগের সাথে এই রোগের কোন মিল নেই। কিছু শিশুর অস্পূর্ণ উপসর্গ দেখা দেয় যার মানে হচ্ছে তাদের অল্প উপসর্গ থাকে ফলে রোগ নির্নয় অনেক কঠিন হয়ে পড়ে এ ধরনের রোগীকে অসম্পূর্ণ কাওয়াসাকি ডিজিজ বলে।

রোগটি কতদিন থাকবে ?
কাওয়াসাকি ডিজিজ ৩ ভাগে বিভক্ত: তীব্র যেখানে জ্বর প্রথম দুই সপ্তাহ থাকে এবং অন্যান্য উপসর্গ থাকে। অল্পতীব্র, দ্বিতীয় থেকে চতূর্থ সপ্তাহ। যে সময়ে অনুচক্রিকা বাড়তে থাকে এবং রক্তনালী প্রসারিত হতে পারে এবং রিকভারী ফেজ: প্রথম হতে তৃতীয় মাস পর্যন্ত যখন সব ল্যাবরেটরী পরীক্ষা স্বাভাবিক হয় এমনি রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা ভালো হয় বা সংকোচন হয়।
চিকিৎসা না করলে হৃৎপিন্ডের ক্ষতি সহ রোগটি দুই সপ্তাহে ভালো হয়।

পরীক্ষা নিরিক্ষার গুরুত্ব কি ?
বর্তমানে কোন পরীক্ষাগারের পরীক্ষা করে রোগ নির্নয় করে না। বেশ কিছু পরীক্ষা রোগ নির্নয়ে সাহায্য করে যেমন অত্যাধিক ইএসআর, সিআরপি, এবং লিউকোসাইটোসিস (শ্বেত কনিকার সংখ্যা বৃদ্ধি), রক্তস্বল্পতা (কম লোহিত কনিকা), সিরাম এলবুমিন কম এবং যকৃতের এনজাইন বেশী। অনুচক্রিকা সে সব রক্তকনিকা রক্ত জমাট বাধায়) সাধারনত প্রথম সপ্তাহে স্বাভাবিক থাকে কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়তে থাকে যা পরে অনেক বেশী হয়।
শিশুদের নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা ও রক্ত পরীক্ষা করতে হয় অনুচক্রিকা বা ইএসআর স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত।
শুরুতেই একটি ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা প্রয়োজন। ইকোকার্ডিওগ্রাম রক্তনালীর অস্বাভাবিক প্রসারন নির্নয় করতে পারে। যেসব বাচ্চাদের হৃৎপিন্ডে সমস্যা পাওয়া যায় তাদের পরবর্তীতে ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং আরও পরীক্ষা ও পর্যালোচনা প্রয়োজন।

এটা চিকিৎসা যোগ্য/ভালো হয় ?
অধিকাংশ শিশু ভালো হয়। তবে কিছু কিছু বাচ্চার সঠিক চিকিৎসা স্বত্বেও হৃৎপিন্ডের সমস্যা হতে পারে। রোগটি প্রতিরোধ যোগ্য নয় তবে হৃৎপিন্ডের জটিলতা কমনোর জন্য দ্রুত রোগ নির্নয় ও মত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

রোগটির চিকিৎসা কি ?
শিশু কাওয়াসকি ডিজিজে আক্রান্ত হলে বা সন্দেহ হলে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা ও রোগীকে পর্যবেক্ষনের জন্য অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করা উচিৎ।
হৃৎপিন্ডের জটিলতা কমানোর জন্য রোগ নির্নয়ের সাথে সাথেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
শিরা পথে উচ্চমাত্রায় ইমিনোগ্লোবিউলিন এর একটি ডোজ এবং অ্যাসপিরিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। এই চিকিৎসা তীব্র সংক্রমন বা প্রদাহ খুব দ্রুত কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন চিকিৎসার একটি অপরিহার্য অংশ যা হৃৎপিন্ডে রক্তনালীর জটিলতা কমাতে সমর্থ। যদিও এটা খুব ব্যায়বহুল কিন্তু একই এটাই কার্যকরী চিকিৎসা। যেসব রোগী বিশেষভাবে ঝুকিপূর্ণ তাদের একই সাথে কর্টিকোস্টেরয়েড দেখা যায়। যেসব রোগীর এক বা দুই ডোজ ইট্রাভেনাস ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিয়ে উন্নতি হয় না তাদের বিকল্প চিকিৎসা হিসাবে ইট্রাভেনাস কটিকোস্টেরয়েড বা বায়োলজিক ড্রাগ দেয়া যায়।

সব শিশুই কি ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিলে ভালো হয় ?
সৌভাগ্যক্রমে বেশীর ভাগ শিশুর একটি ডোজই লাগে। যাদের উন্নতি হয়না তাদের দ্বিতীয় ডোজ বা কয়েক ডোজ কর্টিকোস্টেরয়েড প্রয়োজন। খুব বিরল ক্ষেত্রে নতুন চিকিৎসা যেমন বায়োলজিক্যাল ড্রাগ দেয়া যায়।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি ?
আইভিআইজি সাধারনত নিরাপদ এবং সহনীয় চিকিৎসা। তবে মস্তিষ্কের আবরনে প্রদাহ হতে পারে যদিও খুব বিরল।
আইভিআইজি চিকিৎসার পরে লাইভ এটেনুয়েটেড টীকা দেয়া যাবে না (প্রতিটি টিকা সম্মন্ধে জানার জন্য শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন) উচ্চমাত্রার অ্যাসপিরিন বমি ভাব বা পেটের অসুবিধা হতে পারে।

ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা উচ্চমাত্রার এসপিরিন এর পরে কি চিকিৎসা দিতে হবে ? চিকিৎসা কতদিন চলবে।
জ্বর কমে যাওয়া পরে (সাধারনত ২৪ হতে ৪৮ ঘন্টা পরে) অ্যাসপিরিনের ডোজ কমাতে হবে। রক্তে অনুচক্রিকার কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য স্বল্পমাত্রার এসপিরিন চিলিয়ে যেতে হবে এই চিকিৎসা রক্তনালীর এনিউরিজম বা প্রদাহের স্থানে রক্ত জমাট বাধতে দেয় না। রক্ত জমাট বাধলে বিভিন্ন স্থানে রক্ত প্রবাহিত হতে দেয় না (কার্ডিয়াক ইনফারশন, কাওয়াসাকি ডিজিজের সবচেয়ে বড় জটিলতা) স্বল্প মাত্রার এসপিরিন রক্তের পরীক্ষা স্বাভাবিক করে এবং ফলো আপ ইকো স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। যেসব শিশুদের অ্যানিউরিজম থেকেই যায় তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যাসপিরিন বা অন্য রক্ত জমাট প্রতিরোধী ঔষধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে হবে।

আমাদের ধর্মে রক্ত বা রক্তের উপাদান গ্রহন সমর্থন করে না। অন্য আর কি চিকিৎসা আছে ?
অন্য কোন অপ্রচলিত চিকিৎসার সুযোগ নেই। আইভিআইজি প্রমানিত চিকিৎসা ব্যাবস্থা। আইভিআইজি দিতে না পারলে কটিকোষ্টেরয়েডই কার্যকর চিকিৎসা।

শিশুর চিকিৎসায় কারা অংশ নেবে ?
শিশু বিশেষজ্ঞ, শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং শিশু রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ তীব্র উপসর্গ এবং পরবর্তী ফলো আপ করবেন। যেখানে শিশু রিউমাটোলজিষ্ট নেই সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিওলজিষ্ট রোগী দেখবেন বিশেষভাবে যেসব বাচ্চাদের হৃতপিন্ডের জটিলতা হয়।
রোগের ভবিষ্যতে আরোগ্য সম্ভাবনা কতটুকু ?
বেশীর ভাগ শিশু ভালো হয়। স্বাভাবিক জীবন বৃদ্ধি হয়।
যেসব বাচ্চাদের হৃৎপিন্ডের রক্তনালীর সমস্যা থেকেই যায় বিশেষভাবে রক্তনালীর সংকোচন বা বন্ধ হয়ে যায় তাদের পরবর্তীতে অল্প বয়সে হৃদরোগ হতে পারে এবং তাদের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে থাকতে হয়।


দৈনন্দিন জীবন

শিশু বা তার পরিবারের দৈনন্দিন জীবনে রোগের ভূমিকা কি ?
যদি হৃৎপিন্ড আক্রান্ত না হয় তবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। যদিও অধিকাংশ বাচ্চা সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায় তবে কেউ কেউ খিট খিটে হতে পারে।

স্কুলে যেতে পারবে ?
একবার রোগটি নিয়ন্ত্রন হলে স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবন চালিয়ে যেতে পারবে। বাচ্চাদের স্কুল হল বড়দের কাজের জায়গার যত যেখানে সে স্বাধীন ও সফল হতে শেখে।

খেলতে পারবে কি?
খেলাধুলা প্রতিটি বাচ্চার দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এর লক্ষ্য হচ্ছে শিশুর স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যাওয়া এবং সে যে অন্যদের থেকে আলাদা না তা বোঝানো। যেসব বাচ্চার হৃৎপিন্ডের সমস্যা নেই তারা স্বাভাবিক খেলাধুলা করতে পারবে। কিন্তু যেসব বাচ্চার করোনারী অ্যানিউরিজম আছে তাদের একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষভাবে কৈশরে কোন প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহনের পূর্বে।

সব খেতে পারবে কি ?
কোন খাবার রোগটিতে কোন ভূমিকা রাখে বলে সাক্ষ্য পাওয়া যায় নি। সাধারনভাবে শিশু তার বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক খাবার খাবে। বাচ্চাদের জন্য পরিক্ষিত স্বাস্থকর খাবার যাতে পর্যাপ্ত আমিষ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। র্কটিকোস্টেরয়েডে খাবারের রুচি বেড়ে গেলে বেশী খাবার দেয়া যাবে না।

শিশুকে টিকা দেয়া যাবে ?
আইভিআইজি চিকিৎসার পরে লাইভ এটেনুয়েটেড ভ্যাক্সিন দেয়া যাবেনা।
চিকিৎসক ঠিক করবেন কোন বাচ্চাকে কি টিকা দেযা যাবে। রোগের সময় উপর টিকা দিলে রোগ বা ক্ষতি বাড়ে না। ধারনা করা হয় নন লাইভ ভ্যক্সিন কাওয়াসাকি ডিজিজে নিরাপদ। রোগী রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা হানীকর ঔষধ খেলেও ভ্যাক্সিনের জন্য কোন ক্ষতি হয় বলেও জানা নেই।
যেসব বাচ্চা রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা হানীকর ঔষধ খাচ্ছে তাদের নির্দিষ্ট জীবানুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির মাত্রা চিকিৎসক টিকা দানের পর পরিমাপ করবেন।


 
সাহায্যকারী
This website uses cookies. By continuing to browse the website you are agreeing to our use of cookies. Learn more   Accept cookies