টিউমার নেকরোসিস ফ্যোকটর রিসেপটর এসোসিয়েটেড পিরিওডিক সিনড্রোম (ট্রাপস) অথবা ফ্যামিলিয়াল হাবারনিয়ান ফিবার  


বিবরণ 2016
diagnosis
treatment
causes
TNF Receptor Associated Periodic Syndrome (TRAPS)
টিউমার নেকরোসিস ফ্যোকটর রিসেপটর এসোসিয়েটেড পিরিওডিক সিনড্রোম (ট্রাপস) অথবা ফ্যামিলিয়াল হাবারনিয়ান ফিবার
ট্রেপস একটি প্রবাহ জনিত রোগ যেখানে রোগীর বার বার অতিমাত্রায় জ্বর হয় এবং যা সাধারনত ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। জ্বরের সাথে সাধারনত আরও যে ধরনের অসুবিধা দেখা যায় সেগুলো হলো অন্ত্রের অসুবিধা (যেমন পেট ব্যাথা, বমি, পাতলা পায়খানা), শরীরে ব্যথাযুক্ত লাল লাল দাগ, মাংসপেশীতে প্রদাহ/ব্যথা, চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া। এ রোগের অন্তিম পর্যায়ে কিডনীও বিকল হয়ে যেতে পারে। একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্য এর সাথে একই ধরনের লক্ষন প্রকাশ পেতে পারে। এই রোগের প্রার্দুভাব কেমন ? যদিও এটা সচারাচর দেখা যায়না কিন্তু এ রোগের সত্যিকারের প্রার্দুভাবতা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই সমানভাবে আক্রান্ত হয় এবং সাধারনত শিশু বয়সে এ রোগ শুরু হয়। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ রোগ শুরু হতে দেখা গিয়েছে। এরোগ আক্রান্ত প্রথম রোগী সনাক্ত হয়েছিল আইরিশস্কাটিশ বংশধারায়। যদিও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেমন ফ্রান্স, ইতালীয়, আরবীয়, আর্মেনিয়, সেফরাতিক এবং অ্যাসকেনাজী জিউস ক্যাবিলিয়ান জনগোষ্ঠীয় এর মধ্যে এ রোগের প্রার্দুভাব পরিলক্ষিত হয়। ঋতু ও আবহাওয়া এই রোগ কোন প্রভাব ফেলে না। এ রোগের কারনসমূহ কি ? টিউমার নেকরোসিস ফ্যাক্টর রিসেপটর (TNFRI) নামক প্রোটিনের জন্মগত ত্রুটি এর কারনে এ রোগ হয়, সেটা রোগীর শরীরে স্বাভাবিক প্রদাহ জনিত অনুভূতি কে অধিক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। TNFRI হলে একটি শক্তিশালী প্রদাহ সৃষ্টিকারী অন TNF এর কোষীয় ৎবপবঢ়ঃড়ৎ (গ্রাহক) যদিও এ রোগের বারংবার তীব্র প্রদাহ এবং TNFRI এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোন সম্পর্ক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, তবুও - কোন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি - কোন ক্ষত - মানসিক চাপ ইত্যাদি TNFRI হওয়াকে প্রভাবিত করে। এটা কি জন্মগত/বংশগত ? TNFRI একটি জন্মগত যেমন Autosomal dominant রোগ। পিতা কিংবা মাতার কারো একজনের যদি এ রোগ থাকে এবং যার মানে হলো জিনের অস্বাভাবিক/ত্রুটিযুক্ত TNFRI বহন করে। তাদের মাধ্যমে এই রোগ তাদের সন্তানদের মধ্যে বিস্তার করে। প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরে সকল জীনের দুইটা করে কপি থাকে/দুইটা করে একই জীন থাকে। এজন্য আক্রান্ত পিতামাতার প্রত্যেক সন্তানের ক্ষেত্রে এ রোগ হওয়া/পরিবর্তিত জীন বিস্তার করার সম্ভাবনা ৫০% । জীনের নতুন মিউটেশন (স্থায়ী পরিবর্তন) ও হতে পারে, এ ক্ষেত্রে বাবা মা কারও এ রোগ নাই এবং ত্রুটিপূর্ণ/ পরিবর্তিত জীনও নাই। কিন্তু গর্ভাবস্থায় শিশুর TNFRI জীন ত্রুটিপূর্ণ হয় অথবা জীনের পরিবর্তন (মিউটেশন) পরিলক্ষিত হয়। এই ক্ষেত্রে সচরাচর অন্য বাচ্চার ক্ষেত্রেও TNFRI জীন পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেন আমার শিশু এ রোগে আক্রান্ত ? এ রোগ কি প্রতিরোধ যোগ্য ? TNFRI একটি জন্মগত রোগ। কিন্তু যাদেরই এ ত্রুটিযুক্ত/পরিবর্তিত (মিউটেশন) জীন রয়েছে। তাদের সবাই এ রোগে আক্রান্ত হবে, এমন নাও হতে পারে। এই রোগ এখনও প্রতিরোধযোগ্য নয়। এটা কি সংক্রামক ? TNFRI কোনও সংক্রামক রোগ নয়। শুধুমাত্র যাদের ত্রুটিযুক্ত জীন/ পরিবর্তিত জীন রয়েছে। তারাই এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের প্রধান লক্ষন সমূহ কি কি ? প্রধান সমস্যাসমূহ হলো বার বার জ্বরে আক্রান্ত হওয়া যা সাধারনত ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয় কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে কম সময় অথবা বেশী সময়ের জন্য স্থায়ী হতে পারে। এই জ্বরের সময়ে কাঁপুনী এবং মাংসপেশীর তীব্র ব্যথা যা সাধারনত রোগীর উপরের শরীর এবং দুই হাতে হয়। শরীরে বিশেষ ধরনের দানা ওঠে যা লাল হয় এবং ব্যথাযুক্ত হয়, যা শরীরের চামড়া অথবা মাংসপেশীর প্রদাহের সাথে হয়ে থাকে/ প্রদাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরুতে মাংসপেশীতে তীব্র সালেনী ব্যথা থাকে সেটা আস্তে আস্তে অধিক মাত্রায় বাড়তে থাকে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে থাকে যেমন হাতে পায়ের অন্যান্য অংশে। তারপর শরীরে লাল লাল দানা দেখা যায়। সাধারনত পেটে ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব এবং বমিও দেখা যায়। চোখের সামনে যে পর্দা চোখকে ঢেকে রাখে (কনজাক্টিভা) সেই পর্দার প্রদাহ অথবা চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া এইগুলো TNFRI বিশেষভাবে এ হয়ে থাকে। যদিও এসব লক্ষন/উপসর্গ অন্যান্য রোগেও দেখা যায়। ফুসফুসের পর্দার প্রদাহের কারনে বুকে ব্যথা অথবা হৃদপিন্ডের পর্দার প্রদাহের কারনে বুকে ব্যথা ও দেখা যায়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ রোগ পরিবর্তনশীল/অনিয়মিত এবং মাঝারী দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা হিসাবেও দেখা যায়। যেমন পেটে ব্যথা গিরায় ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, চোখের সমস্যা, যেগুলা জ্বরসহ অথবা জ্বর ছাড়াও হতে পারে এসব সমস্যা হঠাৎ করে পুনরায় হতে পারে এবং বায়োলজিকাল প্যাবামিটার গুলা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়। Amyloidosis হলে TNFRI এর সব থেকে ভয়াবহ/অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা, যেটা ১৪% রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। Amyloidosis নামক পদার্থ যেটা যেকোন প্রদাহের সময় তৈরী হয়, যেটাকে (সেরাম) Serum Amyloid A বলা হয়। কোষে জমা Amyloidosis হয়ে হয়ে থাকে। কিডনীতে Amyloid A জমা হওয়ার কারনে অনেক বেশী পরিমান প্রোটিন (আমিষ) শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায় এবং কিডনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিডনী বিকল হয়ে যায়। আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে কি এ রোগ একই রকম হয়ে থাকে ? TNFRI এ প্রতিবার আক্রান্ত হবার সময় ব্যাপ্তিকাল এবং উপসর্গবিহীন অবস্থার ব্যাপ্তিকাল প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে আরেক রোগীর থেকে আলাদা ভাবে প্রকাশ পায়। বিভিন্ন উপসর্গ একসাথে অথবা একইভাবে প্রকাশ পায়না। এই পার্থক্যের কারন জিনগত হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসাঃ কিভাবে এ রোগ নির্নয় করা যায় ? একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক একজন রোগী পরীক্ষার সময় রোগীর শারীরিক উপসর্গ দেখে এবং পারিবারিক মেডিকেল ইতিহাস থেকে এ রোগ সম্পর্কে সন্দেহ করতে পারে। এই রোগের আক্রান্ত হবার সময়ে কয়েকবার রক্ত পরীক্ষা প্রদাহকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এই রোগ নির্নয় শুধুমাত্র জীন পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা যায়, সেটা জীনের মিউটেশন/ পরিবর্তন হয়েছে এটার প্রমান দিতে পারে। এ রোগের সাথে মিল রয়েছে এমন অন্যান্য রোগ, যেমন ঘনঘন জ্বর, সংক্রামক ব্যাধি, ক্যান্সার এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ, অন্যান্য স্বপ্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ। যেমন Familial Mediterranean Fever (FMF) and Mevalonate Kinase Deficiency (MKD) কি কি পরীক্ষা প্রয়োজন ? এই রোগ নির্নয় করার জন্য কিছু ল্যাবরেটরী পরীক্ষার প্রয়োজন। রোগের আক্রান্তের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন ইএসআর, সিআরপি, সিরাম এমোলয়েড এ প্রোটিন (এসএএ) রক্ত পরীক্ষা , ফ্রিবিনোজেন এই পরীক্ষাগুলো প্রদাহের মাত্রা দেয়ার জন্য জরুরী। রক্তের এই পরীক্ষাগুলো রোগীর বাচ্চা উপসর্গ বিহীন হয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষার রেজাল্ট স্বাভাবিক অথবা স্বাভাবিকের কাছাকাছি চলে এসেছে কিনা দেখার জন্য বার বার করা প্রয়োজনে। প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয় প্র¯্রাবে প্রোটিন (আমিষ) এবং লাল রক্ত কনিকা আছে কিনা দেখার জন্য আক্রান্তের সময়কালে কিছু ক্ষনস্থায়ী, অস্থায়ী পরিবর্তন হতে পারে। রোগীর amyloidosis হলে প্র¯্রাব স্থায়ীভাবে প্রোটিন (আমিষ) উপস্থিত থাকতে পারে। বিশেষায়িত জেনেটিক ল্যাবরেটরীতে TNFRI জীনের সুষ্ট বিশ্লেষন করা হয়। এ রোগের চিকিৎসা কি ? এখনও পর্যন্ত এ রোগের সম্পূর্ণ রুপে সারিয়ে তোলার জন্য কোন চিকিৎসা অথবা এ রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। কিছু ঔষধ যেমন Non-steroidal anti-inflammatory drugs NSAIDs যেমন ibuprofen, naproxen অথবা indomethacin রোগের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। High dose corticosteroids ও কার্যকরী কিন্ত এর দীর্ঘদিনের ব্যবহার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরী করে। soluble TNF receptor (etanercept) ও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বরের আক্রমন প্রতিহত করতে কার্যকরী দেখা গিয়েছে। অপরপক্ষে monoclonal antibodies against TNF ব্যবহার করলে এ রোগ বেড়ে যেতে পারে। সম্প্রতি কিছু টিআরএপিএস রোগে আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে আরেক IL-1 receptor blocking ঔষধ ব্যবহার করে ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি ? কি কি ঔষধ ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিভর করে। এনএসএআইডিএস ব্যবহার করলে মাথাব্যথা, পাকস্থলীতে আলসার, কিডনী বিকল হয়ে যেতে পারে।
evidence-based
consensus opinion
2016
PRINTO PReS
ট্রেপস কি ?
ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসাঃ
প্রাত্যহিক জীবন



ট্রেপস কি ?

ট্রেপস কি ?
ট্রেপস একটি প্রবাহ জনিত রোগ যেখানে রোগীর বার বার অতিমাত্রায় জ্বর হয় এবং যা সাধারনত ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। জ্বরের সাথে সাধারনত আরও যে ধরনের অসুবিধা দেখা যায় সেগুলো হলো অন্ত্রের অসুবিধা (যেমন পেট ব্যাথা, বমি, পাতলা পায়খানা), শরীরে ব্যথাযুক্ত লাল লাল দাগ, মাংসপেশীতে প্রদাহ/ব্যথা, চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া। এ রোগের অন্তিম পর্যায়ে কিডনীও বিকল হয়ে যেতে পারে। একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্য এর সাথে একই ধরনের লক্ষন প্রকাশ পেতে পারে।

এই রোগের প্রার্দুভাব কেমন ?
যদিও এটা সচারাচর দেখা যায়না কিন্তু এ রোগের সত্যিকারের প্রার্দুভাবতা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই সমানভাবে আক্রান্ত হয় এবং সাধারনত শিশু বয়সে এ রোগ শুরু হয়। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ রোগ শুরু হতে দেখা গিয়েছে।
এরোগ আক্রান্ত প্রথম রোগী সনাক্ত হয়েছিল আইরিশস্কাটিশ বংশধারায়। যদিও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেমন ফ্রান্স, ইতালীয়, আরবীয়, আর্মেনিয়, সেফরাতিক এবং অ্যাসকেনাজী জিউস ক্যাবিলিয়ান জনগোষ্ঠীয় এর মধ্যে এ রোগের প্রার্দুভাব পরিলক্ষিত হয়।
ঋতু ও আবহাওয়া এই রোগ কোন প্রভাব ফেলে না।

এ রোগের কারনসমূহ কি ?
টিউমার নেকরোসিস ফ্যাক্টর রিসেপটর (TNFRI) নামক প্রোটিনের জন্মগত ত্রুটি এর কারনে এ রোগ হয়, সেটা রোগীর শরীরে স্বাভাবিক প্রদাহ জনিত অনুভূতি কে অধিক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। TNFRI হলে একটি শক্তিশালী প্রদাহ সৃষ্টিকারী অন TNF এর কোষীয় ৎবপবঢ়ঃড়ৎ (গ্রাহক) যদিও এ রোগের বারংবার তীব্র প্রদাহ এবং TNFRI এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোন সম্পর্ক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, তবুও - কোন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি - কোন ক্ষত - মানসিক চাপ ইত্যাদি TNFRI হওয়াকে প্রভাবিত করে।

এটা কি জন্মগত/বংশগত ?
TNFRI একটি জন্মগত যেমন Autosomal dominant রোগ। পিতা কিংবা মাতার কারো একজনের যদি এ রোগ থাকে এবং যার মানে হলো জিনের অস্বাভাবিক/ত্রুটিযুক্ত TNFRI বহন করে। তাদের মাধ্যমে এই রোগ তাদের সন্তানদের মধ্যে বিস্তার করে। প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরে সকল জীনের দুইটা করে কপি থাকে/দুইটা করে একই জীন থাকে। এজন্য আক্রান্ত পিতামাতার প্রত্যেক সন্তানের ক্ষেত্রে এ রোগ হওয়া/পরিবর্তিত জীন বিস্তার করার সম্ভাবনা ৫০% । জীনের নতুন মিউটেশন (স্থায়ী পরিবর্তন) ও হতে পারে, এ ক্ষেত্রে বাবা মা কারও এ রোগ নাই এবং ত্রুটিপূর্ণ/ পরিবর্তিত জীনও নাই। কিন্তু গর্ভাবস্থায় শিশুর TNFRI জীন ত্রুটিপূর্ণ হয় অথবা জীনের পরিবর্তন (মিউটেশন) পরিলক্ষিত হয়। এই ক্ষেত্রে সচরাচর অন্য বাচ্চার ক্ষেত্রেও TNFRI জীন পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কেন আমার শিশু এ রোগে আক্রান্ত ? এ রোগ কি প্রতিরোধ যোগ্য ?
TNFRI একটি জন্মগত রোগ। কিন্তু যাদেরই এ ত্রুটিযুক্ত/পরিবর্তিত (মিউটেশন) জীন রয়েছে। তাদের সবাই এ রোগে আক্রান্ত হবে, এমন নাও হতে পারে। এই রোগ এখনও প্রতিরোধযোগ্য নয়।

এটা কি সংক্রামক ?
TNFRI কোনও সংক্রামক রোগ নয়। শুধুমাত্র যাদের ত্রুটিযুক্ত জীন/ পরিবর্তিত জীন রয়েছে। তারাই এ রোগে আক্রান্ত হয়।

এ রোগের প্রধান লক্ষন সমূহ কি কি ?
প্রধান সমস্যাসমূহ হলো বার বার জ্বরে আক্রান্ত হওয়া যা সাধারনত ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয় কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে কম সময় অথবা বেশী সময়ের জন্য স্থায়ী হতে পারে। এই জ্বরের সময়ে কাঁপুনী এবং মাংসপেশীর তীব্র ব্যথা যা সাধারনত রোগীর উপরের শরীর এবং দুই হাতে হয়। শরীরে বিশেষ ধরনের দানা ওঠে যা লাল হয় এবং ব্যথাযুক্ত হয়, যা শরীরের চামড়া অথবা মাংসপেশীর প্রদাহের সাথে হয়ে থাকে/ প্রদাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয।
অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরুতে মাংসপেশীতে তীব্র সালেনী ব্যথা থাকে সেটা আস্তে আস্তে অধিক মাত্রায় বাড়তে থাকে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে থাকে যেমন হাতে পায়ের অন্যান্য অংশে। তারপর শরীরে লাল লাল দানা দেখা যায়। সাধারনত পেটে ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব এবং বমিও দেখা যায়। চোখের সামনে যে পর্দা চোখকে ঢেকে রাখে (কনজাক্টিভা) সেই পর্দার প্রদাহ অথবা চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া এইগুলো TNFRI বিশেষভাবে এ হয়ে থাকে। যদিও এসব লক্ষন/উপসর্গ অন্যান্য রোগেও দেখা যায়। ফুসফুসের পর্দার প্রদাহের কারনে বুকে ব্যথা অথবা হৃদপিন্ডের পর্দার প্রদাহের কারনে বুকে ব্যথা ও দেখা যায়।
কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ রোগ পরিবর্তনশীল/অনিয়মিত এবং মাঝারী দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা হিসাবেও দেখা যায়। যেমন পেটে ব্যথা গিরায় ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, চোখের সমস্যা, যেগুলা জ্বরসহ অথবা জ্বর ছাড়াও হতে পারে এসব সমস্যা হঠাৎ করে পুনরায় হতে পারে এবং বায়োলজিকাল প্যাবামিটার গুলা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়। Amyloidosis হলে TNFRI এর সব থেকে ভয়াবহ/অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা, যেটা ১৪% রোগীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। Amyloidosis নামক পদার্থ যেটা যেকোন প্রদাহের সময় তৈরী হয়, যেটাকে (সেরাম) Serum Amyloid A বলা হয়। কোষে জমা Amyloidosis হয়ে হয়ে থাকে। কিডনীতে Amyloid A জমা হওয়ার কারনে অনেক বেশী পরিমান প্রোটিন (আমিষ) শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায় এবং কিডনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিডনী বিকল হয়ে যায়।

আক্রান্ত প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে কি এ রোগ একই রকম হয়ে থাকে ?
TNFRI এ প্রতিবার আক্রান্ত হবার সময় ব্যাপ্তিকাল এবং উপসর্গবিহীন অবস্থার ব্যাপ্তিকাল প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে আরেক রোগীর থেকে আলাদা ভাবে প্রকাশ পায়। বিভিন্ন উপসর্গ একসাথে অথবা একইভাবে প্রকাশ পায়না। এই পার্থক্যের কারন জিনগত হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায়।


ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসাঃ

কিভাবে এ রোগ নির্নয় করা যায় ?
একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক একজন রোগী পরীক্ষার সময় রোগীর শারীরিক উপসর্গ দেখে এবং পারিবারিক মেডিকেল ইতিহাস থেকে এ রোগ সম্পর্কে সন্দেহ করতে পারে।
এই রোগের আক্রান্ত হবার সময়ে কয়েকবার রক্ত পরীক্ষা প্রদাহকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
এই রোগ নির্নয় শুধুমাত্র জীন পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা যায়, সেটা জীনের মিউটেশন/ পরিবর্তন হয়েছে এটার প্রমান দিতে পারে। এ রোগের সাথে মিল রয়েছে এমন অন্যান্য রোগ, যেমন ঘনঘন জ্বর, সংক্রামক ব্যাধি, ক্যান্সার এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ, অন্যান্য স্বপ্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ। যেমন Familial Mediterranean Fever (FMF) and Mevalonate Kinase Deficiency (MKD)

কি কি পরীক্ষা প্রয়োজন ?
এই রোগ নির্নয় করার জন্য কিছু ল্যাবরেটরী পরীক্ষার প্রয়োজন। রোগের আক্রান্তের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন ইএসআর, সিআরপি, সিরাম এমোলয়েড এ প্রোটিন (এসএএ) রক্ত পরীক্ষা , ফ্রিবিনোজেন এই পরীক্ষাগুলো প্রদাহের মাত্রা দেয়ার জন্য জরুরী। রক্তের এই পরীক্ষাগুলো রোগীর বাচ্চা উপসর্গ বিহীন হয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষার রেজাল্ট স্বাভাবিক অথবা স্বাভাবিকের কাছাকাছি চলে এসেছে কিনা দেখার জন্য বার বার করা প্রয়োজনে।
প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয় প্র¯্রাবে প্রোটিন (আমিষ) এবং লাল রক্ত কনিকা আছে কিনা দেখার জন্য আক্রান্তের সময়কালে কিছু ক্ষনস্থায়ী, অস্থায়ী পরিবর্তন হতে পারে। রোগীর amyloidosis হলে প্র¯্রাব স্থায়ীভাবে প্রোটিন (আমিষ) উপস্থিত থাকতে পারে।
বিশেষায়িত জেনেটিক ল্যাবরেটরীতে TNFRI জীনের সুষ্ট বিশ্লেষন করা হয়।

এ রোগের চিকিৎসা কি ?
এখনও পর্যন্ত এ রোগের সম্পূর্ণ রুপে সারিয়ে তোলার জন্য কোন চিকিৎসা অথবা এ রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। কিছু ঔষধ যেমন Non-steroidal anti-inflammatory drugs NSAIDs যেমন ibuprofen, naproxen অথবা indomethacin রোগের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। High dose corticosteroids ও কার্যকরী কিন্ত এর দীর্ঘদিনের ব্যবহার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরী করে। soluble TNF receptor (etanercept) ও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বরের আক্রমন প্রতিহত করতে কার্যকরী দেখা গিয়েছে। অপরপক্ষে monoclonal antibodies against TNF ব্যবহার করলে এ রোগ বেড়ে যেতে পারে। সম্প্রতি কিছু টিআরএপিএস রোগে আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে আরেক IL-1 receptor blocking ঔষধ ব্যবহার করে ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি ?
কি কি ঔষধ ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিভর করে। এনএসএআইডিএস ব্যবহার করলে মাথাব্যথা, পাকস্থলীতে আলসার, কিডনী বিকল হয়ে যেতে পারে।. Corticosteroids and biologic agents ব্যবহার করলে (TNF and IL-1 blockers) শরীরে ইনফেকশন (সংক্রামক ব্যাধি) হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া পড়ৎঃরপড়ংঃবৎড়রফ বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করতে পারে।

কতদিন পর্যন্ত চিকিৎসা চালানো উচিত ?
এটা এখনও পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার নয় যে প্রতিবার নতুন জ্বরের শুরুতে চিকিৎসা করা উচিত নাকি চিকিৎসা সব সময় চালানো উচিত, কারন অল্প সংযক রোগীর ক্ষেত্রে anti-TNF and anti-IL-1 দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

এ রোগের অপ্রচলিত অথবা বাড়তি চিকিৎসা আছে কিনা ?
এখানে কোন ধরনের কার্যকরী বাড়তি চিকিৎসার কোন প্রকাশিত গবেষনা পত্র পাওয়া যায়নি

কিছু সময় অন্তর কি ধরনের পরীক্ষা করা প্রয়োজন ?
রোগী চিকিৎসা পেয়েছে, সে ক্ষেত্রে ২-৩ মাস অন্তর রক্ত পরীক্ষা এবং প্র¯্রাব পরীক্ষা করা উচিৎ।

এ রোগের স্থায়িত্ব কতদিন ?
TRAPS সারাজীবন থাকতে পারে। যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে জ্বরের প্রকোপ বলে আসে কিন্তু রোগের দীর্ঘমেয়াদী এবং পরিবর্তনশীল উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে এই অগ্রগতি amyloidosis হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করেনা।

এ রোগ থেকে কি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব ?
না, কারন TRAPS একটি জেনেটিক (জন্মগত) রোগ।


প্রাত্যহিক জীবন

এ রোগ কিভাবে রোগী এবং তার পরিবারের উপর প্রাত্যহিক জীবনে প্রভাব ফেলে ?
বারবার এবং দীর্ঘমেয়াদী /দীর্ঘস্থায়ী এ রোগের আক্রমনের কারনে প্রাত্যহিক জীবনে, পিতার মাতার পারিবারিক জীবনে এবং চাকুরী জীবনে প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও সঠিক রোগ নির্নয়ের পূর্বে বিবেচনাধীন বিলম্ব হয় সেটা পিতামাতাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে এবং কখনও কখনও অপ্রয়োজনীয় মেডিকেল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।

স্কুলজীবনে কি প্রভাব ফেলে ?
বারবার অসুস্থতা স্কুলে উপস্থিতির বিঘœ ঘটায়। কার্যকরী চিকিৎসার মাধ্যমে স্কুলে অনুপস্থিতি কমানো যায়। শিক্ষকদের এ রোগ সম্পর্কে জানাতে হবে এবং এ রোগ যদি স্কুলে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয় তখনকার করনীয় সম্পর্কে ও জানাতে হবে।

খেলাধূলায় ?
খেলাধূলায় কোন নিষেধ নাই। যদিও বারবার বিভিন্ন খেলাধুলার এবং ট্রেনিং সেশনে রোগাক্রান্ত হওয়ার কারনে অনুপস্থিতি বিভিন্ন প্রতিযোগীতা মূলক খেলাধূলায় অংশগ্রহনে বিঘœ ঘটায়।

আহারের নিয়মাবলী ?
কোন সুনির্দিষ্ট খাবার নাই।

আবহাওয়া জনীত কোন পরিবর্তন এ রোগ কে কি প্রভাবিত করে ?
না, করে না।

শিশুটি টিকা নিতে পারবে ?
হ্যাঁ, শিশু টিকা নিতে পারবে এবং শিশুকে টীকা দেয়া উচিত। যদিও টীকা জ্বর হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে, শিশু যদি corticosteroids or biologic agents দ্বারা চিকিৎসা পায়, শিশুকে সম্ভাব্য ইনফেকশন অথবা সংক্রাবক ব্যাধি হতে প্রতিরোধ করার জন্য টীকা দেওয়া জরুরী।

যৌন জীবনে, গর্ভাবস্থায় এবং জন্মনিয়ন্ত্রনে এর প্রভাব ?
TRAPS এর রোগী স্বাভাবিক যৌন জীবন উপভোগে সক্ষম এবং নিজে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। যদিও তাদেরকে সতর্ক করে দিতে হবে যে তাদের সন্তান এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ৫০% । শিশু এবং তার পরিবারের সাথে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে এই ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে।


 
সাহায্যকারী
This website uses cookies. By continuing to browse the website you are agreeing to our use of cookies. Learn more   Accept cookies